দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার হিসেবে যোগ দিলেন মিতা তঞ্চঙ্গ্যা
স্বাধীন বাংলাদেশে বন বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথম ফরেস্টার (বন রক্ষার মাঠপর্যায়ের বিট কর্মকর্তা) পদে নিয়োগ পেয়েছেন একজন নারী। তিনি বান্দরবানের মিতা তঞ্চঙ্গ্যা। আজ রোববার সকালে ঢাকায় বন অধিদপ্তরে যোগদান করেন তিনি। এই অঞ্চলে বন বিভাগের প্রায় দেড় শ বছরের ইতিহাসেও প্রথম নারী ফরেস্টার মিতা তঞ্চঙ্গ্যা।
বন অধিদপ্তরের ফরেস্ট রেঞ্জার আবিদা সুলতানা জানান, অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মিতা তঞ্চঙ্গ্যাই দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার। এর আগে ২০১৬ সালে বনপ্রহরী পদে দিলরুবা মিলি নামের একজন যোগদান করেন। সেই হিসেবে বন বিভাগের মাঠপর্যায়ে এখন দুজন নারী কাজ করবেন। ফরেস্ট রেঞ্জার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ও উচ্চ পদে বহু নারী কর্মরত। তবে মাঠপর্যায়ে বনপ্রহরী পদে দিলরুবা মিলি ছিলেন প্রথম নারী। ফরেস্টার পদে মিতা তঞ্চঙ্গ্যাকে দিয়ে নারীদের পদায়ন শুরু হলো।
মিতা তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের বঙ্গপাড়ায়। চট্টগ্রামের ফরেস্ট্রি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী মিতা। ডিপ্লোমা ইন-ফরেস্ট্রি কোর্সে পড়াশোনা করেন তিনি। গত বছরের ২০ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত বন অধিদপ্তরের ফরেস্টার নিয়োগ পরীক্ষায় ১৫তম স্থান অধিকার করেন মিতা তঞ্চঙ্গ্যা। এই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ৭৮ জনের মধ্যে তিনি একমাত্র নারী। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আজ বন অধিদপ্তরে যোগদান করেছেন। সেখান থেকে তাঁদের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পদায়ন করা হবে।
যোগদানপত্র হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাসিত মিতা তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বলেন, ‘বন বিভাগের একজন মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। যেখানে পদায়ন করা হোক, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করব। তবে নিজের জেলা বান্দরবানে পদায়ন করলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব। এই জেলার বনাঞ্চল, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আছে আমার।’
তবে বন বিভাগে মাঠপর্যায়ের নিয়োগে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন জানিয়ে মিতা বলেন, শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে ওজন ও উচ্চতায় নারী-পুরুষের জন্য সমান মাপ রাখা হয়েছে। এ কারণে শারীরিক পরীক্ষায় নারীরা বাদ পড়ে যাচ্ছেন। এই বৈষম্য দূর করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়ে এক গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৬৬ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে বেঙ্গল ফরেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের আওতায় বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব বাংলায়) বন বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এই দীর্ঘ সময়ে ফরেস্টার পদে কোনো নারী সরকারি এই বিভাগে কাজ করেননি। সেই হিসাবে ১৫৯ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার এই বিভাগ সরাসরি বন রক্ষার সঙ্গে যুক্ত একজন নারী মাঠ কর্মকর্তা পেল।