উদ্যোক্তা মেলায় বায়োস্কোপ ঘিরে কিশোর-তরুণদের উচ্ছ্বাস

বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় বায়োস্কোপ উপভোগ করছে দুই স্কুলছাত্র। গতকাল বিকেলে গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠের চলছে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা। সেখানে ক্যাসেট প্লেয়ারে ভেসে আসছে কবি কামরুজ্জামান কামুর লেখা গান—‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ, বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়ে না।’ গানটি বাজিয়ে সেখানে বায়োস্কোপ দেখাচ্ছেন এক যুবক। ওই বায়োস্কোপ ঘিরে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের জটলা। বই–পুস্তক বা টিভির পর্দায় দেখা বায়োস্কোপ সরাসরি উপভোগের সুযোগ পেয়ে কিশোর–তরুণদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।

গ্রামের পথে পথে এক সময় কাঁধে বাক্স নিয়ে ডুগডুগি বাজিয়ে বায়োস্কোপওয়ালা ঘুরতেন। গ্রামের শিশুরা ছুটত তাঁর পেছন পেছন। বাক্সের চারখানা ফুটোয় চোখ লাগিয়ে কল্পনার সিনেমা দেখতেন গ্রামের মানুষ। তবে টেলিভিশন আর ইন্টারনেটের সময়ে এসে বায়োস্কোপের দেখা মেলা দুস্কর। বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় বায়োস্কোপ নিয়ে এসেছেন আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার রাজন চন্দ্র বর্মন। কোনো ধরনের টিকিট ছাড়াই বিনা মূল্যে যেকোনো বয়সের মানুষ বায়োস্কোপ উপভোগ করতে পারছেন।  

গত শনিবার থেকে ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে শুরু হয়েছে ১০ দিনব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলা। গতকাল সোমবার এই মেলায় বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো বায়োস্কোপ দেখে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার। নাদিয়ার সঙ্গে থাকা বন্ধুরাও বেশ উচ্ছ্বসিত। নাদিয়া বলেন ‘বায়োস্কোপের নাম অনেক শুনেছি। কিন্তু কখনো দেখা হয়নি। আজই প্রথম দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছিল অন্য কোনো এক জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম।’

মেলায় ঘুরতে আসা কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ওমর খান বলে, ‘দাদা ও আব্বুর কাছে বায়োস্কোপের গল্প শুনেছি। আজ সরাসরি দেখলাম। আমার তো দারুণ লেগেছে, এটা অনেকটা ম্যাজিকের মতো।’

বায়োস্কোপওয়ালা রাজন বলেন, ‘বায়োস্কোপ আমাদের দেশের সংস্কৃতি বহন করে। তবে বর্তমান সময়ে বায়োস্কোপের অবস্থা একেবারেই সংকটাপন্ন। ইন্টারনেট, টিভি, মুঠোফোন, সিডি ও ভিভিডির সহজলভ্যতার কারণেই বায়োস্কোপের প্রচলন কমে গেছে। এখন আর ঘুরে ঘুরে বায়োস্কোপ দেখানোর প্রচলনও নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেলার আয়োজন করা হলে এখন আমাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে মেলা কমিটি ছেলেমেয়েদের বায়োস্কোপ দেখানোর জন্য আমাদের ভাড়া করেছে। তাই কারও কাছ থেকে কোনো টাকাপয়সা নেওয়া হচ্ছে না।’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, একসময় গ্রামগঞ্জের পথেঘাটে বায়োস্কোপ দেখানো হতো। কখনো পয়সা আবার কখনো ধান–চালের বিনিময়ে মানুষ বায়োস্কোপ দেখতেন। গ্রাম–বাংলার প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয় থাকা প্রয়োজন। এ জন্যই মূলত এই মেলায় বায়োস্কোপ আনা হয়েছে। এতে করে বর্তমান প্রজন্মের শিশু–কিশোরেরা দেশীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে।