বদরগঞ্জে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক নিয়োগে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

ঘুষ
প্রতীকী ছবি

রংপুরের বদরগঞ্জের আউলিয়াগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিতে এক প্রার্থীর কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় ওই পদে আবেদনকারী প্রার্থী শাহজাহান আলীসহ ৯ প্রার্থী যৌথ স্বাক্ষরে আজ বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

৪ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাড়ির উঠানে লুঙ্গি পরে চেয়ারে বসে আছেন আউলিয়াগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলরাম রায়। এ সময় বলরাম রায়ের পাশে থাকা এক ব্যক্তি টাকার বান্ডিল বাড়িয়ে দেন। বলরাম রায় টাকাগুলো বাম হাতে নেওয়ার চেষ্টা করলে আপত্তির মুখে পরে ডান হাতে নেন। টাকার পরিমাণ ৭৫ হাজার শুনে তিনি প্রথমে গুনতে অনাগ্রহ দেখান। পরে তিনি টাকা গুনে নিশ্চিত হন সেখানে ৭৫ হাজার টাকা আছে।

ভিডিওতে প্রধান শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, ‘ভাই (স্কুল পরিচালনা কমিটির কেউ) মোক কইছে যে, ৮ নেউক (নিক) আর ১০ নেউক, পাঁচ নেউক আর না নেউক, মোক কইছে, হেডমাস্টারের দুই (দুই লাখ) থাকবে। তোরা জাহান্নামে সউগ (সব) টাকা শ্যাষ করি দেন, আমার দেখার বিষয় নাই। আমি কোনো টাকার গ্যাঞ্জামোতো (ঝামেলায়) যাবার নাই। কাগোজোত এক্কেবারে ঝকঝকা আমি সিল–স্বাক্ষর দেমো।’

এরপর প্রধান শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে পাশের একজন (পরিচালনা কমিটির জনৈক সদস্য) বলেন, ‘এখন মোর কথা শুন, হামরাওতো আছি, মুইও কিন্তু আছু, উলা দুই–টুই নোয়ায় (দুই লাখ না), তুই পাবু টাকা দ্যাড় (দেড় লাখ)।’

পরে প্রধান শিক্ষক সম্মতি প্রকাশ করে বলেন, ‘মোর দ্যাড় মানে মোর কোনো টেনশন নাই। বাকিগুলো তোরা সউগ সুদ্দা নেমেন (বাকি সব টাকা আপনার সবাই নেন)। যাও হইল। তোরা এখন সেটা (টাকা) খান না স্কুলোত দেন, সেটা তোমার ব্যাপার।’

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের একজন অফিস সহায়ক পদে লোক নিয়োগের জন্য ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ওই পদের বিপরীতে ১৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। ওই পদে নিয়োগ দিতে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল মমিন ও প্রধান শিক্ষক বলরাম রায় অনৈতিকভাবে টাকা নেওয়া শুরু করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

লিখিত অভিযোগে ওই নয় প্রার্থী দাবি করেছেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। ওই পদে নিয়োগের কথা বলে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছেন। এখন সভাপতি তাঁর ভাতিজা শহিদুজ্জামানকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এর আগেও ওই বিদ্যালয়ে দুজন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তাঁরা ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অফিস সহায়ক পদে আবেদনকারী আউলিয়াগঞ্জ গ্রামের শাহিনুর ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবক সদস্য শাহজাহান আলী তাঁকে এ পদে নিয়োগের বিনিময়ে ১৩ লাখ টাকা চান। পরে ৯ লাখ টাকায় বিষয়টি রফা হয়। তিনি গরু বিক্রি করে ইতিমধ্যে দুই দফায় প্রধান শিক্ষককে ১ লাখ ৫৫ হাজার এবং অভিভাবক সদস্য শাহজাহান আলীকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। তবুও তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।

তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক বলরাম রায়। তিনি বলেন, ‘ওইটা ঘুষের টাকা নয়, ফরম ফিলাপের (এসএসসির ফরম পূরণের) টাকা। এটি ভিডিও করে ছড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল মমিন বলেন, ‘মনে হচ্ছে সব কিছুই ষড়যন্ত্র। আমরা কারও কাছে টাকা নেইনি।’

অভিভাবক সদস্য শাহজাহান আলীও দাবি করেছেন, টাকা নেওয়ার যে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়োগের টাকা নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন, ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাওয়া লিখিত অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, আউলিয়াগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।