হত্যা ও স্বর্ণ লুট, সাভারে আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা, নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি

সাভারের নয়ারহাট বাজারে আগের রাতে স্বর্ণের ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার পর থেকে বাজারের অন্য স্বর্ণ ব্যাবসায়ীরা দোকান বন্ধ রেখেছেন। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলায় নয়ারহাট বাজারে রয়েছে ৩৫টি সোনার দোকান। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের ছোট–বড়  শতাধিক দোকান। গতকাল রোববার রাতে এ বাজারের ‘দিলীপ স্বর্ণালয়’ নামের সোনার দোকানের মালিক দিলীপ দাসকে (৪৮) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। লুটে নেয় স্বর্ণালংকার। এ ঘটনার পর থেকে বাজারের সব ব্যবসায়ী আতঙ্কে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে ব্যবসা করা সম্ভব হবে নয় বলছেন তাঁরা।

বাজারে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণের ব্যবসা করেন শুভ জুয়েলার্সের মালিক মনোরঞ্জন রাজবংশী। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একের এর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা চাই, এই এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি দেওয়া হোক। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। নিরাপত্তা না পেলে এ ব্যবসা করা সম্ভব নয়। এখন জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। ২০২১ সালে এই বাজারের ১৭টি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়। এরপর প্রিয়াংকা জুয়েলার্সে আট-নয় মাস আগে ডাকাতি হয়েছিল। গতকাল রাতে দিলীপের দোকানে ঘটনা ঘটল। এভাবে কীভাবে আমরা ব্যবসা করব?’

আজ সোমবার দুপুরে নয়ারহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের অন্যান্য পণ্যের দোকানগুলো খোলা থাকলেও বন্ধ রয়েছে অধিকাংশই সোনার দোকান। কয়েকটি সোনার দোকানের শাটার নামিয়ে কিছুটা খুলে বসে আছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। পুরো বাজারের পরিবেশ থমথমে।

নয়ারহাট বাজার স্বর্ণশিল্পী সমিতির সভাপতি আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ৪২ বছর ধরে এই বাজারে সোনার ব্যবসা করছি। এখানে শুরুতে তিন-চারটি দোকান ছিল। এখন ৩৫টি দোকান। এটি খোলাবাজার। এর আগেও দুই-তিনবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। এভাবে চললে আমরা কীভাবে ব্যবসা করব? ব্যবসা করা সম্ভব হবে না। এখন কারও নিরাপত্তা নেই। নিরাপত্তা না থাকলে এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। সবাই দোকানপাট বন্ধ করে রেখেছে। এখানে আসবে ভালো শরীরে, আর যাবে লাশ হয়ে; এই পরিস্থিতি চলছে। আমরা চাই সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিক।’

এদিকে বেলা তিনটার দিকে দিলীপ দাসের হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দাবিতে বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। পরিবারের সদস্যরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নিহত দিলীপ দাসের স্ত্রী সরস্বতী দাস বলেন, ‘আমার স্বামীরে মাইরা ফালাইছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই। আপনেরা আমারে বিচার কইরা দেবেন। কী কষ্ট কইরা যে মরছে। আমি বিচার চাই।’

দিলীপ দাসের শ্যালক রিপন চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতি একজন ভালো ব্যবসায়ী। কারও সঙ্গে তাঁর ঝামেলা ছিল না। গতকাল রাতে তাঁকে কুপিয়ে মারা হয়েছে। এমন ঘটনা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে। বাসায় চলে গেছিলেন। পরে একজন ফোন করে স্বর্ণের চেইন কিনবে জানাইয়া দোকানে ডেকে আনেন। এ সময় আমার বোনও ছিল। পরে চকলেট বোমা ফুটাইয়া ব্যাগ ছিনাইয়া নিয়ে কুপাইয়া তাঁরে নির্মমভাবে মারা হয়।’

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবীর প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ছিনতাই ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় নিহত দিলীপ দাসের স্ত্রী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন। ইতিমধ্যে দুজন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। মূলত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দিলীপ দোকান থেকে চলে গিয়েছিলেন। এরপর দুজন নারী স্বর্ণ কিনবেন জানিয়ে দোকানে ডেকে এনেছিলেন। এর পরই ঘটনাটি ঘটে। ওই দুই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। ঘটনার সময় ককটেল নয়, আতশবাজি–জাতীয় কিছু ফাটানো হয়েছিল। আশা করছি, দ্রুতই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।