উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে জামালপুরে যমুনা নদীর পানি ধীরগতিতে বাড়ছে। ইতিমধ্যে ৩টি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীর পানি বাড়ায় ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
যমুনা নদীর তীরবর্তী জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী, পাথর্শী, সাপধরী, বেলগাছা, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া; দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিজাকাজানী, চুকাইবাড়ী, বাহাদুরাবাদ ও পৌরসভার আংশিক, মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ, জোড়খালী, বালিজুড়ী, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া, ঝাউগড়া, কুলিয়া, নাংলা ও আদ্রা ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত রোববার থেকে পানি অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা করছেন এসব অঞ্চলের হাজারো মানুষ।
বেলগাছা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো.ইব্রাহিম বলেন, তাঁর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রথম দিকে পানি ধীরে ধীরে বাড়ছিল। কিন্তু দুই দিন ধরে পানি দ্রুত বাড়ছে। গ্রামের সব রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। চলাচলের জন্য নৌকাও পাওয়া যাচ্ছে না। চরাঞ্চলের মানুষ নৌকার অভাবে কোথাও যেতেও পারছে। তারা দুর্ভোগের মধ্যে আছে।
আজ সকাল ১০টার দিকে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এখন বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য সময়ের চেয়ে এবার খুব ধীরগতিতে পানি বাড়ছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি বাড়ার আশঙ্কা কম। গত বুধবার থেকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকেই বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বড় ধরনের কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই।
যমুনার পানি বুধবার বিকেল থেকে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন পানিবন্দী কয়েকজন। তাঁদের ভাষ্য, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ও বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চলের বেশ কিছু পরিবার গবাদিপশু নিয়ে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। নদীবেষ্টিত এলাকার বেশির ভাগ বাড়িতেই এখন পানি। বাড়ির আঙিনা ও রাস্তায় হাঁটুসমান পানি। এরই মধ্যে কেউ কেউ উঁচু স্থানে গবাদিপশু নিয়ে রেখেছেন। এতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ। ইতিমধ্যে চরাঞ্চলের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো.জহুরুল ইসলাম বলেন, পুরো ইউনিয়ন যমুনাতীরবর্তী। এর ফলে বেশির ভাগ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দী। বেশির ভাগ ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গবাদিপশুর খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলের মানুষ একদম হতদরিদ্র। পানিবন্দী হয়ে পড়ায় কোনো রোজগার নেই। এসব এলাকায় এখন পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজন।
জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, পানি আরও কিছুটা বাড়ায় ৩টি উপজেলার নিচু অঞ্চলের প্রায় ৩ হাজার ২০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৮০টি পরিবার একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতাও করা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় ৫টি উপজেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।