লালমনিরহাটে কিশোরকে গলা কেটে হত্যা, গ্রেপ্তার একজনের তথ্যে বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার

হত্যা
প্রতীকী ছবি

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে ফাহিম ফরহাদ (১৬) নামের এক কিশোরের বস্তাবন্দী গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের একটি ডোবা থেকে বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় স্থানীয় মধু চন্দ্র রায় (১৮) নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে আদিতমারী থানার পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্যেই ফাহিমের মরদেহ, মোটরসাইকেল, মুঠোফোন এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত ফাহিম ভাদাই ইউনিয়নের আরাজি দেওডোবা গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে। সে একই উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের ওসমান গণি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। অভিযুক্ত মধু চন্দ্র রায় ভাদাই ইউনিয়নের বড়াবাড়ি রুহানীনগর গ্রামের সুবাস চন্দ্র রায়ের ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকেলে ফাহিম ও মধু একসঙ্গে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বের হন। রাতে ফাহিম বাড়িতে না ফেরায় তার পরিবারের সদস্যরা খোঁজখবর করেন। কোথাও তার সন্ধান না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আদিতমারী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এই জিডির তদন্তের এক পর্যায়ে মধু চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে ফাহিমের মুঠোফোন জব্দ করে পুলিশ। পরে মধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মধু ফাহিমকে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন। জেলা পুলিশ সুপার আজ বিকেলে মধুকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে নিহত ফাহিমের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করেন। সেই সঙ্গে মধুর বাড়ির ধানের ডুলি (ডোল) থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে মধু জানান, তিনি দা দিয়ে ফাহিমকে উপর্যুপরি কোপ মারেন। এতে সেখানেই ফাহিমের মৃত্যু হলে লাশ বস্তায় ভরে ধানখেত দিয়ে টেনে নিয়ে পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেন।

আদিতমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নিহত স্কুলছাত্র ফাহিম ফরহাদের বাবা শাহজাহান আলী বাদী হয়ে আজ সন্ধ্যায় আদিতমারী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে মধু চন্দ্র রায়কে প্রধান আসামি করে আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধু শৈশবে বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর তাঁর মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়। সেই থেকে মধু তাঁর কাকার (চাচা) বাড়িতে বেড়ে ওঠেন। বড় হওয়ার পর মধু নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় কাজ করতেন। এ সময় মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িতে এসে চুরিসহ নানান অপরাধ করতেন, নেশাও করতেন। সম্প্রতি মধু একটি পুরোনো মোটরসাইকেল নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। এই মোটরসাইকেল কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে মধু ও ফাহিমের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুরু হয়।

স্কুলছাত্র ফাহিম ফরহাদের নিখোঁজসংক্রান্ত জিডির অনুসন্ধানে প্রথমে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। পরে আটক মধু চন্দ্র রায়ের দেওয়া তথ্যমতে ফাহিমের বস্তাবন্দী মরদেহ তাঁর বাড়ির পাশের ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ফাহিমকে গলায় দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ ডোবায় ফেলে দেওয়ার কথা মধু চন্দ্র রায় স্বীকার করেন। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, তদন্ত করা হচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার, লালমনিরহাট

জিজ্ঞাসাবাদে মধুর দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মধু তাঁর মোটরসাইকেলটি ফাহিমের কাছে বিক্রি করেন। মঙ্গলবার বিকেলে দুজন একসঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘোরাফেরা করেন। রাতে মধুকে তাঁর বাড়িতে নামিয়ে দেন ফাহিম। এ সময় কথা বলার এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল কেনাবেচার টাকা লেনদেন নিয়ে দুজনের তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে মধু দা দিয়ে ফাহিমকে উপর্যুপরি কোপ মারেন। এতে সেখানেই ফাহিমের মৃত্যু হলে লাশ বস্তায় ভরে ধানখেত দিয়ে টেনে নিয়ে পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেন মধু। ফাহিম মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের পক্ষ থেকে আদিতমারী থানায় জিডি করা হয়। এই জিডির সূত্রেই ধরা পড়েন মধু।

এ বিষয়ে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলছাত্র ফাহিম ফরহাদের নিখোঁজসংক্রান্ত জিডির অনুসন্ধানে প্রথমে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। পরে আটক মধু চন্দ্র রায়ের দেওয়া তথ্যমতে ফাহিমের বস্তাবন্দী মরদেহ তাঁর বাড়ির পাশের ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ফাহিমকে গলায় দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ ডোবায় ফেলে দেওয়ার কথা মধু চন্দ্র রায় স্বীকার করেন। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, তদন্ত করা হচ্ছে।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ উন নবী জানান, আটক মধু চন্দ্র রায়কে হত্যা মামলার পর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মরদেহ আগামীকাল শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ওসি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আদিতমারীর ভাদাই ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার একটি পুকুর থেকে আজ বিকেলে ফাহিমের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে।