শতবর্ষী খেলার মাঠ রক্ষা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার ৭ নারী জামিনে মুক্ত

সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত সাত নারী। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে খেলার মাঠ রক্ষা করতে গিয়ে সংঘর্ষের জেরে তিন দিন ধরে কারাগারে থাকা ওজুফা বেগমসহ সাত নারী জামিনে মুক্ত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহজাদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামিন আবেদনটি উপস্থাপন করা হলে বিচারক গোলাম রব্বানী শুনানি শেষে সাত নারীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

কারাগারে নেওয়ার ফলে ওজুফা বেগমের আড়াই বছরের সন্তান মরিয়মের কান্না নিয়ে প্রথম আলোর শেষ পাতায় আজ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সাত নারীর পক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘প্রথম আলোতে “মা কারাগারে, কাঁদছে শিশু” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর আমরা জামিন আবেদনের সঙ্গে এই দুগ্ধপোষ্য শিশুর বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদটি আদালতে উপস্থাপন করেছি। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক বিষটি আমলে নিয়ে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।’ তিনি বলেন, জামিনের আদেশের কপি জেলা কারাগারে পাঠানো হলে সব প্রক্রিয়া শেষে সন্ধ্যায় তাঁরা মুক্তি পান।

জামিন আবেদনের সঙ্গে দুগ্ধপোষ্য শিশুর বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

ওই সাত নারী হলেন উপজেলার বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামের হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী ওজুফা বেগম (৪০), আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (২৬), মৃত আক্তার হোসেনের মেয়ে ফুল পরী (৫০), আনসপ আলীর স্ত্রী মালেকা বেগম (৪০), নজরুল ইসলামের স্ত্রী খুশি বেগম (৪০), জামাল হোসেনের স্ত্রী আখলিমা খাতুন (৫৫) ও আবদুল আলীমের স্ত্রী সফিয়া খাতুন (২৫)।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার শতবর্ষী বলদিপাড়া-হলদিঘর খেলার মাঠ
ছবি: প্রথম আলো

গত রোববার সকালে শাহজাদপুর উপজেলার বলদিপাড়া এলাকায় শতবর্ষী খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। এ সময় সংঘর্ষে সহকারী কমিশনার আহত হন। এ ঘটনায় রোববার রাতেই মামলা করা হয়। এ ঘটনায় ওজুফাসহ সাত নারী ও দুই পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার দুপুরে বলদিপাড়া-হলদিঘর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের আনাগোনা তেমন নেই। এ সময় বেশ কয়েজন নারী জানান, গ্রেপ্তার নারীদের মধ্যে আড়াই বছরের সন্তানের মা ওজুফা যেমন রয়েছেন, তেমনি সাড়ে তিন বছরের শিশু আফিয়া খাতুনের মা মালেকা বেগমও রয়েছেন।

ওজুফা বেগমের মা জহুরা বেগম গতকাল বলেন, ‘আমার মেয়ের কী অপরাধ ছিল জানি না। আমি অসুস্থ। মরিয়ম মায়ের জন্য কান্না করেই যাচ্ছে। বুকের দুধ না পেয়ে রাতে ঘুমের মধ্যে কান্না করে উঠছে মরিয়ম। এখন আমি কী করব?’

সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতৃ-দুগ্ধপোষ্য শিশুর মাকে কোনো অবস্থাতেই আদালতের আদেশ ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না। এটি আইনের চরম লঙ্ঘন।