আশুগঞ্জে ইউপি নির্বাচনের জেরে যুবলীগ নেতাকে হত্যার অভিযোগ, মানববন্ধন-বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের জেরে পায়ের রগ কেটে ও ছুরিকাঘাতে ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা জনি মিয়াকে (৩৫) হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার তালশহর বাজারসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, বিচার ও ফাঁসির দাবিতে লোকজন মাথায় কাফনের কাপড় লাগিয়ে জেলা শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

নিহত ব্যক্তির পরিবারের ভাষ্য, গত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করার কারণে সাবেক চেয়ারম্যানের লোকজন জনিকে হত্যা করেছে।

নিহত জনি মিয়া তালশহর পশ্চিম ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ার নিয়াজ মকসেন মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। হামলায় নিহত ব্যক্তির চাচাতো ভাই আউয়াল মিয়া নামের (৪৭) এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি আশুগঞ্জের ৮টি ইউপিতে নির্বাচন হয়। আশুগঞ্জে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ পাঁচ বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হন। এর মধ্যে তালশহর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পাঁচবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবু শামাকে পরাজিত করে জয়ী হন নৌকার প্রার্থী সোলায়মান মিয়া। ইউপি নির্বাচনের আগে থেকে এই দুই প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান মিয়ার পক্ষে কাজ করেছিল নিহত জনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে তালশহর বাজারে থাকা নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে জনি মিয়া চাচাতো ভাই আউয়াল মিয়াকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হন। ফেরার পথে বাজারসংলগ্ন সেতু পার হতেই কয়েক দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় জনির দুই পায়ের রগ কেটে ফেলা হয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। আউয়ালকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁদের ঢাকায় নেওয়ার পথে জনি মিয়া মারা যান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

এদিকে আজ বেলা একটার দিকে লোকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় জনি হত্যার ঘটনায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু শামা পক্ষের লোকজনের গ্রেপ্তার, বিচার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি হাসপাতাল সড়ক থেকে শহরের মঠের গোড়া পর্যন্ত প্রদক্ষিণ শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

নিহত ব্যক্তির বাবা নিয়াজ মকসেন মিয়া বলেন, ‘গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে আমার ছেলে নির্বাচন করেছে। এই নির্বাচনই তার কাল হলো। নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবু শামার দুই ছেলে ও তাঁর লোকজন আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।’

তালশহর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোলায়মান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে হারের পর থেকেই সাবেক চেয়ারম্যান আবু ও তাঁর দুই ছেলে তাঁর কর্মী–অনুসারীদের মারধর করেছেন। এখন পর্যন্ত চারটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তালশহর পশ্চিম ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবু শামা ও তাঁর ছেলে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আমির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাহিদ আহমেদ দুর্বৃত্তদের হামলায় একজনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।