ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কেন অসন্তোষ

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন পদবঞ্চিত নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

জেলা আওয়ামী লীগের পাঠানো তালিকা থেকে অনেক নেতার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এরপর বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। এমন অভিযোগে গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক নেতারা।

আন্দোলনকারীদের দাবি, পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য জেলা থেকে পাঠানো তালিকা থেকে তাঁদের অনেকের নাম বাদ দিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা এমন কাজ করেছেন বলে তাঁদের অভিযোগ।

ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ভৌমিক আজ বুধবার সকালে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূলত আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় দুজন নেতা বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান করে দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি মানতে না পেরে প্রতিবাদ করছি। আমাদের ইচ্ছা ছিল বিষয়টি আওয়ামী লীগপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীকে জানাব। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে। তা ছাড়া এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করাও হয়তো সহজ হবে না। কাজেই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব থেকে ওই দুই নেতার অব্যাহতিও আমাদের দাবি।’

গত ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়। ২৭ জনকে উপদেষ্টা সদস্য করে ১০২ জনের ওই কমিটি করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে রাজাকারের সন্তান, রাজাকারের জামাতা, ভিন্ন দল থেকে আসা ব্যক্তি ও বিভিন্ন সময়ে দলের বিদ্রোহী হয়ে স্থানীয় নির্বাচন করা ব্যক্তিরা পদ পেয়েছেন। অথচ অনেক পুরোনো ও ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন। সোমবার এমন দাবিতে নগরের ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক নেতারা। মানববন্ধনে ময়মনসিংহ জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে কেন তাঁরা বিতর্কিত, সে ব্যাখ্যা দেন। গতকালও একই দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়।

মানববন্ধনে জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান পাওয়া মৃণাল মুর্মুর বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায়। নেত্রকোনা জেলা থেকে ভাড়া করা লোক এনে ময়মনসিংহ জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হয়নি। স্থান পাওয়া সদস্য আবদুল মোতালেব ও মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রব আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আগে অন্য দল করতেন। কমিটির উপদেষ্টা কায়সার আহমেদ কেন্দ্রীয় যুবলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত এবং সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার কখনোই ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সদস্য আনিসুজ্জামান ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মফিজুন নূর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন।

সমাবেশে গুরুতর অভিযোগ করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাওয়া সহসভাপতি এম এ ওয়াহেদের বিরুদ্ধে। বলা হয়, ওয়াহেদ বিদেশে বসবাস করেন। তিনি মাত্র পাঁচ বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। মাত্র পাঁচ বছর রাজনীতি করেই ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক দিলরুবা শারমীন ও সদস্য নুরজাহান মিতুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা দুজনই জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।

শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আবু সাহাদাত সায়েম, উপদপ্তর সম্পাদক মোস্তাফা মামুনুর রায়হান এবং বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদও নেই।

আজ সকালে এ বিষয়ে কথা বলতে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমকে ফোন করা হলে তিনি জেলা থেকে পাঠানো তালিকা থেকে কিছুসংখ্যক নাম বাদ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। এহতেশামুল বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে সবাইকে হয়তো দলে রাখা যাবে না। তবে পুরোনো ও ত্যাগী নেতাদের রাখা উচিত।

১৬ জনের তালিকায় থাকা জেলা কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মফিজুন নূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া। এ বিষয়ে মফিজুন নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তৎকালীন গৌরীপুরের সংসদ সদস্য প্রয়াত মজিবুর রহমানের নির্দেশে আওয়ামী লীগের স্বার্থেই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে কোনো বহিষ্কারের চিঠি নেই। আমাকে ছাড়াও যাঁদের নামে অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, সেসব অভিযোগও সঠিক নয়।’