বনরক্ষীদের দেখে ১৩২ কেজি হরিণের মাংস ফেলে পালালেন শিকারিরা

সুন্দরবন থেকে ৬টি বস্তায় ১৩২ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেছেন বনরক্ষীরা। আজ মঙ্গলবার সকালে কয়রা উপজেলা বন বিভাগের কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো।

সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া বন টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের দেখে নৌকা ফেলে পালালেন শিকারিরা। পরে ওই নৌকা থেকে ১৩২ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার ভোরে সুন্দরবনের চালকি খাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ সম্পর্কে শাকবাড়িয়া বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ ভোরে আমি ও আমার ফাঁড়ির বনরক্ষী আলী হোসেন, জুয়েল রানা ও আনিসুর রহমান টহল দেওয়ার জন্য ট্রলার নিয়ে গহিন বনে যাই। শাকবাড়িয়া নদী পেরিয়ে বনের টানার ভারানী খাল ধরে সুন্দরবনের চালকি খাল এলাকায় একটি নৌকা দেখতে পাই। আমাদের দেখে নৌকা ফেলে কয়েকজন গহিন বনের মধ্যে পালিয়ে যান। আমরা তাঁদের পিছু নিলে তাঁরা ঘন জঙ্গলে ঢুকে যান। এ কারণে কাউকে আটক করতে পারিনি।’

পরিত্যক্ত নৌকা তল্লাশি করে ছয়টি বস্তায় হরিণের মাংস পাওয়া গেছে বলে জানান শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সুন্দরবনের নদী–খালে মাছ ও বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই সময়ে বনে ঢুকে শিকার করা একেবারে পেশাদার শিকারিদের কাজ। মাংসের পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে অন্তত আটটি হরিণ শিকার করা হয়েছে।

সুন্দরবন–সংলগ্ন কয়রা উপজেলার কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়রার একটি ছোট নদী পেরোলেই সুন্দরবনের গহিন জঙ্গল। পেশাদার হরিণশিকারিরা রাতে গোপনে সুন্দরবনে ঢুকে নাইলনের দড়ির এক ধরনের ফাঁদ হরিণের নিয়মিত যাতায়াতের পথে পেতে রাখেন। চলাচলের সময় হরিণগুলো সেই ফাঁদে আটকে যায়। তারপর বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণের মাংস লোকালয়ে এনে বিক্রি করা হয়। এসব শিকারিদের তৎপরতা এত দিন কিছুটা কম ছিল। বর্তমানে বন্ধ মৌসুমে আবারও শিকারিরা সংগঠিত হয়েছে। বিশেষ করে কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, জোড়শিং, ৪ নম্বর কয়রা, উত্তর বেদকাশী ও মহেশ্বরীপুর এলাকায় হরিণশিকারি চক্রের দৌরাত্ম্য বেশি।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, সুন্দরবন থেকে চোরা শিকারিরা হরিণ শিকার করে মাংসসহ হরিণের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে চালকি খাল ধরে লোকালয়ের দিকে যাচ্ছে। এরপর দ্রুত শাকবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের সেখানে পাঠানো হয়। বনরক্ষীদের দেখে নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে যায় শিকারিরা। তাঁদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁদের বাড়ি কয়রা উপজেলার ৪ নম্বর কয়রা গ্রামে।

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় আদালতে বন্য প্রাণী নিধন আইনে মামলা করা হবে। জব্দ করা হরিণের মাংস খুলনা সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট-১ আদালতে পাঠানো হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে হরিণের মাংস বিনষ্ট করা হবে। হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।