মায়ের লাশ দেখতে ইতালি থেকে ফিরছিলেন, পথে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত

নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতালিপ্রবাসী শাহ আলমের (৫০) মা গতকাল বুধবার মারা গেছেন। শেষবারের মতো তাঁর মরদেহ দেখার জন্যই আজ বৃহস্পতিবার শাহ আলম দেশে ফেরেন। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁকে আনার জন্য মাইক্রোবাস নিয়ে তিন স্বজন গিয়েছিলেন। ফেরার পথে নরসিংদীর শিবপুরে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে তাঁদের মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে শাহ আলম ও তাঁর এক স্বজন নিহত হন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে শিবপুর উপজেলার ঘাসিরদিয়া এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শাহ আলম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উত্তর নাটাই এলাকার শাহজাহান মিয়ার ছেলে। নিহত অপর ব্যক্তির নাম মো. সেলিম (৪৫)। তিনি একই উপজেলার তালশহর অষ্টগ্রাম এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে।

হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া এলাকা অতিক্রমের সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ভেতরে অবস্থান করা চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মো. সেলিমের মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহ আলমও মারা যান। আহত অপর দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক।

মাইক্রোবাসের চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মো. সেলিমের মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইতালিপ্রবাসী শাহ আলমও মারা যান।

১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিবপুরে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার একজনকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আরেকজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁদের লাশ মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’

মাইক্রোবাসে থাকা সাব্বির মিয়া নামের একজন বলেন, ‘মায়ের মরদেহ শেষবারের জন্য দেখার জন্যই ইতালি থেকে শাহ আলম আজ দেশে ফেরেন। তাঁকে বিমানবন্দর থেকে আনার জন্য মাইক্রোবাস নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম। ফেরার পথে ঘাসিরদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটল। মায়ের লাশ শাহ আলম দাফন করতে পারলেন না। এখন মায়ের সঙ্গে তাঁকেও দাফন করতে হবে আমাদের।’

এ বিষয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, প্রবাসীকে নিয়ে ওই মাইক্রোবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফিরছিল। দুর্ঘটনায় নিহত দুজনের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মনোহরদীতে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

নরসিংদীর মনোহরদীতে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় মো. সোহাগ মিয়া (২০) নামের একজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মো. সোহাগ মিয়া মনোহরদী উপজেলার গোতাশিয়া ইউনিয়নের পাঁচকান্দী গ্রামের মো. ওয়াহেদ উদ্দিনের ছেলে।

নিহত তরুণের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, মনোহরদীতে কাজ শেষ করে নিজের মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন সোহাগ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মনোহরদী বাসস্ট্যান্ড এলাকা অতিক্রমের সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে তাঁর মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সোহাগের মৃত্যু হয়।

মনোহরদী থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, সোহাগ নামের ওই তরুণের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে পিকআপ ভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে। তবে এর চালক পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।