প্রচারণার শুরুতেই জমজমাট কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যালয়

কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয়ে চলছে পোস্টার টানানোর প্রস্তুতি। গতকাল রাত সোয়া ১১টার দিকে সিলেট নগরের উপশহর ডি ব্লক এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

তখন রাত ১১টা। কয়েকজন তরুণ বসে খোশগল্প করছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এক যুবক রশি, পোস্টার আর আঠা গোছাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে কক্ষে ঢুকলেন কাউন্সিলর প্রার্থী শোয়াইবুর রহমান। তিনি তাঁদের দ্রুত বেরোনোর তাগাদা দেন। এরপর তাঁরা পাড়া-মহল্লায় পোস্টার সাঁটাতে বের হলেন।

গতকাল শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে এ দৃশ্য দেখা গেছে সিলেট নগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উপশহর ডি ব্লক এলাকায়। সেখানেই ছিল কাউন্সিলর প্রার্থী শোয়াইবুর রহমানের নির্বাচনী কার্যালয়। এখানে বসেই কথা হয় মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি নিজেকে শোয়াইবুরের কর্মী পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দের পর সারাটা দিন ব্যস্ততায় গেছে। গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা চালাতে হয়েছে। এখন পোস্টার সাঁটাতে হবে।’

একটু দূরে একই ওয়ার্ডের উপশহর ই ব্লকে কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ দিদার হোসেনের নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ছোট কক্ষটিতে দুজন বসে আছেন। একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য অপেক্ষা করছেন। অন্যজন মুঠোফোনে নিমগ্ন। বাইরে প্লাস্টিকের অন্তত অর্ধশতাধিক চেয়ার পাতা আছে। সাত থেকে আট ব্যক্তি দুই দিকে বসে খোশগল্প করছেন। নিজেদের মধ্যে তাঁরা ওয়ার্ডের ভোটের হিসাব-নিকাশও করছেন।

আরও পড়ুন

খোশগল্পে মেতে থাকা হাসিব আহমদ জানান, তিনি পেশায় ঠিকাদার। তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী দিদার হোসেনকে সমর্থন জানিয়েছেন। মূলত এখানে বসে ভোটের বিষয় নিয়েই আলাপ করছেন। এ ছাড়া সবাই মিলে কাউন্সিলর প্রার্থীর আসার অপেক্ষায় আছেন।

গতকাল সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সরেজমিন নয়জন কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সবখানেই আলোঝলমলে। প্রত্যেক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ কেউ পোস্টার গুনে গুনে আলাদা করে রাখছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁদের কার্যক্রম নিয়েও কাউকে কাউকে কথা বলতে শোনা গেছে। কোন প্রার্থী কবে কোন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন, সে ছকও করতে দেখা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কার্যালয়ে বসে অনেক প্রার্থী কুশল বিনিময়ও করছিলেন।

১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের শ্যামলী এলাকায় দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মোছা হাজেরা বেগমের নির্বাচনী কার্যালয়ে চারজনকে চেয়ারে বসে কথা বলতে দেখা গেছে। তাঁদেরই একজন মো. আবদুর রশিদ। তিনি জানান, প্রার্থী সম্পর্কে তাঁর ভাবি। সন্ধ্যার দিকে মিলাদ মাহফিল করে কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে। কর্মী-সমর্থকেরা পোস্টার সাঁটানোর জন্য বাইরে বেরিয়েছেন। তাঁদের বিদায় দিয়ে তাঁরা এখানে বসে কথা বলছেন।

গভীর রাতেও আলো ঝলমলে কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয়। গতকাল রাতে সিলেট নগরের উপশহর ই ব্লক এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাত ১২টার দিকে মেজরটিলা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচনী কার্যালয়ে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করছেন একজন। কার্যালয়ে থাকা মো. টিপু নামের এক যুবক বলেন, সারা দিন অনেক মানুষ কার্যালয়ে এসেছেন। প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন থেকেই তাঁদের কার্যালয় ভোটারদের উপস্থিতিতে জমে উঠেছে।

রাত ৯টার দিকে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শান্তনু দত্তের নির্বাচনী কার্যালয় নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কার্যালয়ের অভ্যন্তরে পেতে রাখা চেয়ারে ৮ থেকে ১০ জনের একদল তরুণ বসে রয়েছেন। তাঁদের সামনে একটি টেবিল পাতা রয়েছে। তাতে কাউন্সিলর প্রার্থীর বেশ কয়েকটি প্রচারপত্র রাখা। কার্যালয়ে যাঁরা আসছিলেন, তাঁদের প্রচারপত্রগুলো দেওয়া হচ্ছে। কার্যালয়ের প্রবেশ মুখে ঘুড়ি প্রতীকে ভোট চেয়ে রশি দিয়ে পোস্টার টানানো রয়েছে। কার্যালয়ে অভ্যন্তরে একটি ঘুড়ি টানিয়ে তাতে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

আরও পড়ুন

কাউন্সিলর প্রার্থী শান্তনু দত্তকে দেখা গেছে তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে। কিছু সময় পরপর মোটরসাইকেল ও রিকশায় করে অনেকে কার্যালয়ে এসে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে। এ সময় তিনি তাঁদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

শান্তনু দত্ত বলেন, তিনি ওয়ার্ডটির পাঁচবারের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সবাই এখন পরিবারের সদস্য হয়ে গেছেন। দুপুরের দিকে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের পর অনেকেই নিজ থেকে এসে প্রচারণা চালাতে সহযোগিতা করছেন।

২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিক্রম করের নির্বাচনী কার্যালয় নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায়। সেখানে দেখা গেছে, ১০ জনের একটি দলের সঙ্গে কথা বলছেন কাউন্সিলর প্রার্থী। কিছুক্ষণ পরপর আরও লোকজন আসছেন, যাচ্ছেন। নির্বাচনী কার্যালয়ে আড্ডারত বেলাল আহমদ বলেন, ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দুজন। সকালে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর বিক্রম করের প্রচারপত্র ছাপানোর জন্য ছাপাখানায় দেওয়া হয়েছে। আজ সেগুলো হাতে পাওয়ার পর ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইবেন। তবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন তাঁরা।

কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয়ে চলছে আড্ডা। গতকাল রাতে সিলেট নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামলী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বড়বাজার এলাকাটি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকাধীন। ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন রিমাদ আহমদ। নির্বাচনে তিনি ঠেলাগাড়ি প্রতীক পেয়েছেন। প্রতীক পাওয়ার পর বড়বাজার এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন করেছেন। তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, রিমাদ দুই ব্যক্তির সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। নির্বাচনী কার্যালয়ের অভ্যন্তরে ২০টি চেয়ার পাতা। কয়েকজন তরুণ ও মধ্যবয়সী পৃথক দুই দিকে চেয়ারে বসে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলেন।

রিমাদ আহমদ বলেন, তাঁকে সমর্থন জানাতে ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোটার ও বাসিন্দারা আসছেন। তিনি তাঁদের কাছে দোয়ার পাশাপাশি পরামর্শ চাইছেন। ওয়ার্ডের নাগরিক সমস্যার কথাও শুনছেন। নির্বাচিত হলে বাসিন্দাদের নিয়েই সমাধান করতে চান।

আরও পড়ুন

নগরের আখালিয়াঘাট এলাকায় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী কার্যালয় করেছেন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আক্তার হোসেন। কার্যালয়ে প্রার্থীর ছবি ও রেডিও প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যানার টানানো। সেখানে বিভিন্ন বয়সের ১২ থেকে ১৫ জন মানুষ বসে গল্প করছেন। কার্যালয়ে উপস্থিত থাকা আবুল কালাম বলেন, সিটি করপোরেশনের নতুন বর্ধিত ওয়ার্ডটিতে এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাঁদের প্রার্থী নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনের অন্যান্য ওয়ার্ডের মতো নতুন ওয়ার্ডটিতেও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করবেন।

৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডলিয়া এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী বিপ্লব চক্রবর্তীর নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে। রাতে কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ১০ থেকে ১২ জনের বিভিন্ন বয়সের একদল মানুষ সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন কাউন্সিলর প্রার্থী। কার্যালয়ে টানানো ছিল ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান-সংবলিত ব্যানার।

বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, তাঁর ওয়ার্ডটি নতুন ওয়ার্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় নাগরিক সুবিধা কম। ওয়ার্ডটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে তরুণদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য তিনি প্রার্থী হয়েছেন। এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটির ভোট অনুষ্ঠিত হবে।