গোয়ালন্দে প্রায় অর্ধলাখ টাকায় বিক্রি হলো সাড়ে ৩৭ কেজির বিপন্ন বাগাড়
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে আজ মঙ্গলবার বিকেলে সাড়ে ৩৭ কেজি ওজনের একটি বাগাড় মাছ প্রায় অর্ধলাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এই মাছ মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, এই মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ।
আজ সকালে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে প্রায় আট কিলোমিটার ভাটিতে বাহির চর কলার বাগান এলাকায় জেলেদের জালে বিশাল আকৃতির বাগাড় মাছটি ধরা পড়ে। পরে ঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মাসুদ মোল্যা বাগাড়টি ৪৫ হাজার টাকায় কিনে ৪৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
জেলে ও স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় নদীতে বাগাড়, পাঙাশ, রুই, রিঠাজাতীয় মাছ ধরা পড়ছে। মাছ ধরতে স্থানীয় বাসিন্দারাসহ মানিকগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের জেলেরা দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ভিড় করছেন। আজ সকালে বাহির চর এলাকার জেলে অচেল হালদার কয়েকজনকে নিয়ে জাল-নৌকাসহ বের হয়েছিলেন। বেলা ১১টার দিকে ফেরিঘাট থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার ভাটিতে কলার বাগান এলাকায় জাল ফেলেন তাঁরা। কিছুক্ষণ পর জাল ঝাঁকি দিলে বুঝতে পারেন, বড় কিছু আটকা পড়েছে। জাল টেনে নৌকায় তুলেই দেখেন বড় একটি বাগাড়। নৌকায় তুলে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায়।
স্থানীয় রওশন মোল্যার আড়তে অন্যান্য মাছের সঙ্গে বাগাড়টি নিলামে তোলা হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মাসুদ মোল্যা ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে মাছটি কিনে নেন। মাছটির ওজন হয় ৩৭ কেজি ৬০০ গ্রাম। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, ওই এলাকায় এত বড় বাগাড় অনেক দিন পর ধরা পড়ল।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মাসুদ মোল্যা বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে বড় বাগাড় বিক্রির খবর পেয়ে নিলামে অংশ নিই। সাড়ে ৩৭ কেজি ওজনের বাগাড় মাছটি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৪৫ হাজার টাকায় কিনে নিই।’ মাছটি ফেরির পন্টুনের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। বাগাড়টি বিক্রির জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন পরিচিতজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন তিনি। বিকেলে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা করে লাভে ঢাকার এক পরিচিত ব্যবসায়ীর কাছে প্রায় ৪৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেন মাসুদ মোল্যা। মাছটি আগামীকাল বুধবার সকালে ঢাকায় পাঠানোর কথা রয়েছে। বাগাড় মাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ, এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে ওই মাছ ব্যবসায়ী জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
বন্য প্রাণী (সংলক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, বাগাড় মাছ একটি সংরক্ষিত বন্য প্রাণী। বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বাগাড় মাছ তফসিলভুক্ত সংরক্ষিত বন্য প্রাণী। আইন অনুযায়ী, বাগাড় শিকার, ক্রয় এবং বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ। আইইউসিএন তালিকা অনুযায়ী বাগাড় মাছ মহাবিপন্ন প্রাণী।
গোয়ালন্দ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজবাড়ী সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল-রাজীব বলেন, বাগাড় মাছ সংরক্ষিত বন্য প্রাণী আইনে চলে গেছে। মৎস্য সংরক্ষণ আইনে না থাকায় তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। তাঁর জানামতে, বাগাড় শিকার, ক্রয়-বিক্রয় বা খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই।