বেহাল সড়ক সংস্কার হয় না, চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ

গত ১৫ বছর মহাম্মদপুর-মোমিনপুর সড়কে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। ওই পথে চলাচলকারী ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বেহাল সড়কে নেই পিচ। সম্প্রতি গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

সড়কের পিচ উঠে গেছে। খানাখন্দ হয়ে খোয়া-বালুও আর নেই। সড়কের দুই ধার দেবে যাওয়ায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক সময় সড়কেই যান উল্টে পড়ে।

এটি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মহাম্মদপুর-মোমিনপুর সড়কের চিত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত ১৫ বছর এই সড়কে কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। ওই পথে চলাচলকারী ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই অঞ্চলে প্রচুর শাকসবজির আবাদ হয়। সড়ক ভাঙা হওয়ায় কৃষকের ভোগান্তি হচ্ছে।

উপজেলার বাওট থেকে মটমুড়া হয়ে মহাম্মদপুর গ্রাম দিয়ে সড়কটি মোমিনপুর এলাকায় চলে গেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় আট কিলোমিটার। সড়কের বেশির ভাগ জায়গাজুড়ে খানাখন্দ। এর মধ্যে মহাম্মদপুর গ্রামে পড়েছে প্রায় চার কিলোমিটার। এই চার কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি মহাম্মদপুর গ্রামের অন্তত ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, এ সড়ক দিয়ে মটমুড়া ইউনিয়নের মোমিনপুর ও চরগোয়াল গ্রামের বাসিন্দারা হোগলবাড়িয়া যাতায়াত করে। বাওট মটমুড়া হয়ে মহাম্মদপুর যেতে এই সড়ক পড়ে। গ্রামের মাঝখানে একমাত্র সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা চরম বিপাকে পড়েছে। সড়কের দুই ধার ভেঙে ও দেবে সড়কটি সংকুচিত হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে গেছে। যানবাহনে ঝাঁকুনি খেতে হয়। শহরের কলেজে যাতায়াত করতে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ পোহান।

সড়ক বেহাল হওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা গ্রামের খেত থেকে কৃষিপণ্য নিতে আগ্রহ কম দেখান। এতে লোকসানের মুখে পড়েন চাষিরা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কটির সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন কৃষকেরা।

রাজু আহমেদ নামের এক কৃষক বলেন, কৃষিপণ্য শহরের হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় আতঙ্কে থাকি, কখন গাড়ি ভেঙে যায়।

ইজিবাইকের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছি কয়েকবার। কখন দুর্ঘটনা ঘটে, আতঙ্কে থাকতে হয়। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত প্রয়োজন।’

ভ্যানচালক শাহীন আহমেদ বলেন, পাকা সড়ক বলতে কিছু নাই। ভাঙাচোরার কারণে ভাড়ায় যেতে ইচ্ছা হয় না। এমনকি বেশি ভাড়া দিলেও যেতে মন চায় না। ভাঙা জায়গায় পড়ে ভ্যানের ক্ষতি হয়। এতে বাড়তি টাকা খরচ হয়। অনেক রাস্তার মেরামতকাজ হয়, কিন্তু এই রাস্তার কাজ কখনো হয় না।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া খাতুন বলে, ‘জন্ম থেকেই সড়কটি বেহাল দেখছি। স্কুলে যেতে ভোগান্তি হয়। বৃষ্টি হলে ভোগান্তি বেড়ে যায়। কোনো যানবাহন যেতে চায় না। যানবাহনে চড়লেও আতঙ্ক থাকি, কখন যেন উল্টে যায়।’

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ‘আমার নিজের গ্রামেই ভাঙাচোরা এই সড়ক। সড়কটি নিয়ে এলাকার মানুষের কাছে নানা কথা শুনতে হয়। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে সড়ক সংস্কারের জন্য আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এবার শুনছি, সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আছাদুজ্জামান বলেন, সড়কটি বেহাল দেখে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। মামলাসংক্রান্ত একটি বিষয়ে সড়কের কাজ দীর্ঘদিন আটকে ছিল। সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। দুর্যোগে ভেঙে যাওয়া সড়ক সংস্কারের আওতায় একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে।