২৮ বছর পর ঘরে ফিরলেন ‘কেনু মিয়া’

২৮ বছর পর ঘরে ফেরা কাজী মাহবুব

ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। ২৮ বছর আগে ঘর থেকে বের হয়ে যান, আর ফেরেননি। ভবঘুরে হয়ে ঘুরছিলেন এদিক-ওদিক। অবশেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর সূত্র ধরে ঘরে ফেরার সুযোগ হলো তাঁর। স্বজনকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে ভাসছে পরিবার।

দীর্ঘদিন পর ঘরে ফেরা এই ব্যক্তির নাম কাজী মাহবুব (৫০)। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় দীর্ঘদিন অবস্থান করা এই ব্যক্তি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত কেনু মিয়া নামে।

গত শনিবার কাজী মাহবুবকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেন সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকার মানুষ।

পরিবার ও চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে কাজী মাহবুব ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরিবারের সদস্যেরা দীর্ঘদিন খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি। মাহবুব ২০০৪ সালের দিকে সোনাগাজীর ইসলামপুর এলাকায় আসেন। তিনি তাঁর নিজের ও পরিবারের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। স্থানীয় মো. এছাকের পুরোনো বাড়িতে ছিলেন তিন বছরের মতো। পরে আরেক বাসিন্দা ওয়াজি ওল্যার বাড়িতে ছিলেন সাত বছর। পরে জেবল হক নামের আরেকজনের ঘরে অবস্থান করে আসছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন মাহবুব এলাকার সবার কাছে হয়ে ওঠেন ঘনিষ্ঠজন।

মাঝেমধ্যে এলাকার মানুষের ঘরে গিয়ে ভাত বা টাকা খুঁজতেন তিনি। গত বুধবার স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর ঘরে ভাত খেতে গিয়েছিলেন। এ সময় ওই সংবাদকর্মী তাঁর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন।

আবুল হোসেন নামের ওই সংবাদকর্মী বলেন, তিনি ভিডিওটি প্রকাশের পর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের বেলাল হোসেন নামের সাবেক এক ইউপি সদস্য তাঁকে ফোন দেন।

একপর্যায়ে তিনি কাজী মাহবুবকে ভিডিও কলে দেখতে চান। পরে তাঁকে দেখে বেলাল হোসেন বলেন, কেনু মিয়া নামে পরিচিত হলেও তিনি তাঁদের এলাকার কাজী মাহবুব। তিনি সম্পর্কে তাঁর চাচা। মাহবুব বিয়ে করেননি। তাঁর মা বেঁচে আছেন। ভাই–বোনেরাও আছেন।

আবুল হোসেন বলেন, পরদিন বৃহস্পতিবার বেলাল মাহবুবের মা ও ভাইদের ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। এ সময় পরিবারের সদস্যেরা মাহবুবের পরিচয় নিশ্চিত করেন। সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুদ্বীপ রায়ের মাধ্যমে এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর মাহবুবকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাহবুবকে নিতে গত শুক্রবার দুপুরে তাঁর ভাই কাজী বাবুল ও ভাতিজা কাজী বেলাল সোনাগাজীতে আসেন। পরে শনিবার তাঁরা মাহবুবকে নিয়ে যান।

কাজী বাবুল বলেন, ১৯৯৪ সালে তাঁর ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাঁর ভাইকে আর ফিরে পাবেন, সেটি তাঁদের কল্পনার বাইরে ছিল। তাঁর ভাইয়ের দেখাশোনা করায় সোনাগাজীর ইসলামপুরের বাসিন্দাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

ইসলামপুরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন এই ব্যক্তি আমাদের পরিবারের সদস্যের মতোই ছিলেন। তিনি পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন, এটি আনন্দের।’