ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, হাফেজ মাহবুব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সন্ত্রাসীদের অবস্থান এবং মাদক চোরাচালানের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছিলেন। মাহবুবের তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এসব কারণে শনিবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের সশস্ত্র একটি গোষ্ঠীর সদস্যরা মাহবুবকে ঘর থেকে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১২) জি-৭ ব্লকের পাশে পাহাড়ি ঢালুতে নিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, রাতে গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা হাফেজ মাহবুবকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১২) এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত ১০টার দিকে গুলিবিদ্ধ মাহবুবকে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাফেজ মাহবুবকে মৃত ঘোষণা করেন। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। নিহত হাফেজ মাহবুবের বুকে দুটি গুলির দাগ রয়েছে।
এর আগে ১৬ মার্চ উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮) মাহবুবুর রহমান (৩৫) নামের আরেকজন রোহিঙ্গাকে অপহরণের পর ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা আবু শামার ছেলে। আগের দিন ১৫ মার্চ একই আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) পৃথক দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় আবদুর রশিদ (৩০) নামে আরেকজন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবক নিহত হন। তিনি ওই ক্যাম্পের সি ব্লকের আবুল বশরের ছেলে।
আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন, আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বশত্রুতার জেরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গোলাগুলি-সংঘর্ষ ও খুনোখুনিতে লিপ্ত রয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের তথ্যমতে, গত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৩৩ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ৮ জন আরসার, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।