নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র আইভীর জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে ডিভিশন প্রদানের আদেশ

গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। গত শুক্রবার সকাল ১০টায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পোশাকশ্রমিক মিনারুল হত্যা মামলায় কারাবন্দী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে কারা কর্তৃপক্ষকে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান। প্রথম আলোকে তিনি জানান, আইভীর পক্ষে তাঁর আইনজীবী আদালতে জামিন আবেদন ও আসামিপক্ষের আইনজীবী ডিভিশন চেয়ে আবেদন জানালে কারা কর্তৃপক্ষকে ডিভিশন সুবিধা প্রদানের আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে জামিন নামঞ্জুর হয়েছে।

আদালতে জামিন শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিম কোটের আইনজীবী এস এম সিদ্দিকুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুবুর রহমান, আওলাদ হোসেন, জিয়াউল ইসলাম, জাহিদুল হকসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

শুনানি শেষে সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেলিনা হায়াৎ আইভী এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে কখনো মাঠে নামেননি। তাঁর বিরুদ্ধে যে কয়টা মামলা আছে, সেগুলো মিথ্যা মামলা। তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য মামলাগুলোতে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এ কারণে তাঁর জামিন আবেদনে বিলম্ব হচ্ছে। সাবেক মেয়র আইভী প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় ছিলেন, আমরা তাঁকে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা প্রদানের জন্য আবেদন করলে আদালত নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন এবং কারা কর্তৃপক্ষকে ডিভিশন সুবিধা প্রদানের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।’

অপর আইনজীবী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘এই মামলার মূল আসামি শামীম ওসমান ও গং। তাঁরা নির্বিঘ্নে দেশ ছেড়ে গেছেন। মেয়র আইভী নারায়ণগঞ্জবাসীকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করেছেন এবং বিগত দিনে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করে নারায়ণগঞ্জবাসীকে শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছেন। সেখানে আজকে আইভী গ্রেপ্তার, মানুষ হতবাক। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যে স্পিরিট, আইভীকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে তার বিপরীত অবস্থানে দাঁড়াল সরকার। সরকার একদিকে বলছে তদন্ত ব্যতীত কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। অথচ তদন্ত ব্যতীতই নারায়ণগঞ্জের মানুষের সবচেয়ে আস্থার জায়গা আইভীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা আইনগতভাবে লড়াই করে তাঁকে মুক্ত করে আনব।’

গত বছরের ২০ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আদমজী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন পোশাকশ্রমিক মিনারুল ইসলাম। শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরদিন গ্রামের বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ২৩ সেপ্টেম্বর নিহত মিনারুলের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় এজাহারভুক্ত ১২ নম্বর আসামি সেলিনা হায়াৎ আইভী।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটির সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তারে তাঁর দেওভোগ এলাকার বাড়িতে অভিযান চালায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। আইভীকে গ্রেপ্তারের খবরে তাঁর সমর্থক ও এলাকাবাসী দুটি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন। তাঁরা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সাড়ে ছয় ঘণ্টা নাটকীয়তার পর শুক্রবার ভোর পৌনে ছয়টার দিকে চুনকা কুটিরের বাড়ি থেকে পুলিশ আইভীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে ওই দিন সকাল ১০টায় পোশাককর্মী মিনারুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।