গাজীপুরে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় ওসি ও দুই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ

নিহত সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের বাসন থানাধীন পেয়ারাবাগান এলাকার সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর থানায় মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি)।

প্রতিবেদনে বাসন থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও দুই সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

আজ সোমবার দুপুরে জিএমপির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা প্রথমে দুই এএসআইকে প্রত্যাহার ও সাময়িক বরখাস্ত করি। দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়ে পরবর্তী সময়ে ওসিকেও আমরা প্রত্যাহার করেছি। সেই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইজিপির কাছে সুপারিশ করেছি।’

রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক তদন্তে তাঁদের গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলার যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছি। যার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছি।’

নিহত রবিউল ইসলাম রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার সাহজাদপুর গ্রামের আবদুল বাকির ছেলে। তিনি গাজীপুরের বাসন পেয়ারাবাগান এলাকায় বসবাস করে টেইলার্সের সুতা বিক্রি করতেন। অনলাইন জুয়া খেলা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে গত ১৪ জানুয়ারি রাতে রবিউলকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় বাসন থানা–পুলিশ। এর তিন দিন পর পুলিশের পক্ষ থেকে রবিউলের স্ত্রী নুপুর বেগমকে জানানো হয়, তাঁর স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

পুলিশের নির্যাতনে রবিউলের মৃত্যুর অভিযোগে তুলে গত ১৮ জানুয়ারি সকালে তাঁর স্বজন ও এলাকাবাসী দুই মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় এলাকাবাসী দুটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও পুলিশের ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় গাজীপুর মহানগর পুলিশ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। আর পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানোর ঘটনায় ১৯ জানুয়ারি রাতে বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হানিফ মাহমুদ বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬০০ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যু বাসন থানা–পুলিশের নির্যাতনে হয়নি, তিনি সড়ক দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন। তদন্ত কমিটি ওই ঘটনায় ৮৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তির পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকও মৃত্যুর কারণ দুর্ঘটনাজনিত বলে উল্লেখ করেছেন। প্রাথমিক তদন্ত শেষে কমিটি তদন্ত করে পর্যবেক্ষণসহ একটি সুপারিশ প্রদান করেছে। সুপারিশে ওই ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে একজন আটক ব্যক্তিকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নেওয়া হয়নি।

জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, আটক ব্যক্তিকে রাতে স্বজনদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু উচিত ছিল তাঁকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া। এসব ক্ষেত্রে থানার ওসির দায়িত্বে অবহেলা ও যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। যার কারণে ওসি মালেক খসরু খানকে প্রত্যাহার এবং এএসআই মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশের আরও কারও গাফিলতি বা কর্তব্যকাজে অবহেলা করে থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানার ওসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইজিপি বরাবর সুপারিশসহ পত্র পাঠানো হয়েছে।

ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ যে দুটি মামলা করেছিল, সেগুলোও তদন্তাধীন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) দোলোয়ার হোসেন; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) জিয়াউল হক; উপপুলিশ কমিশনার ইলতুৎ মিশ, আলমগীর হোসেন, তোরাব মো. শামছুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।