পিতৃপরিচয়হীন যমজ দুই শিশু পেল নতুন ঠিকানা আর নাম

পিতৃপরিচয় না পাওয়া যমজ দুই সন্তান ও তাদের মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে আলাদা স্থানে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিদায় জানাতে হাসপাতাল চত্বরে যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন
ছবি: প্রথম আলো

পিতৃপরিচয় না পাওয়া যমজ দুই শিশু ও তাদের মানসিক ভারসাম্যহীন মা অবশেষে পেলেন স্থায়ী ঠিকানা। তবে দুই সন্তান ও তাদেরক মাকে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দুটি আলাদা অ্যাম্বুলেন্সে করে আলাদা দুটি স্থানে পাঠানো হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৮ দিন এই হাসপাতালে ভর্তি থাকা যমজ দুই শিশুকে খুলনার ছোটমণি নিবাসে আর তাদের মাকে ঢাকার কাশিমপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। গাড়িতে ওঠার আগে যমজ শিশু দুটিকে পরানো হয় রঙিন নতুন জামা আর তাদের মানসিক ভারসাম্যহীন মাকেও পরানো হয় নতুন শাড়ি।
আইনি জটিলতায় এত দিন নবজাতকদের নাম রাখা না গেলেও আজ সকালে তাদের নাম রাখা হয়েছে। হাসপাতাল ছাড়ার আগে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ছেলেশিশুটির নাম রাখা হয় মোহাম্মদ মুসা আর মেয়ে শিশুটির নাম রাখা হয় মোছা. মাইশা।

ওই যমজ দুই শিশু ও তাদের মাকে বিদায় জানানোর সময় হাসপাতলে উপস্থিত ছিলেন যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুণ অর রশিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ইয়াকুব আলী মোল্লা, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

দুই শিশু মুসা ও মাইশাকে নিয়ে খুলনার ছোটমণি নিবাসের উদ্দেশে যাত্রা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের চাইল্ড প্রটেকশন কর্মকর্তা খালেদা আক্তার এবং তাদের মা মোছা. মাহিনুরকে গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকতা মুনা আফরিন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুণ অর রশিদ বলেন, ‘মা ও দুই নবজাতক হাসপাতালে আসার পর আমরা সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। সন্তান দুটি তাদের মায়ের কাছে নিরাপদ নয়। কারণ, তাদের মা মানসিক ভারসাম্যহীন। যখনই শিশু দুটিকে মায়ের কোলে দেওয়া হয়, তখনই তিনি ফেলে দেন। যে কারণে মা ও দুই সন্তানকে পৃথক দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।’

৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নতুনগ্রামের জামিরুল ইসলামের পরিত্যক্ত ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন।

গত সোমবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় মা ও সন্তানদের দুই আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পুলিশের আবেদনের শুনানিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১–এর বিচারক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী ও দুই নবজাতকের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডকে দায়িত্ব দেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নতুনগ্রামের জামিরুল ইসলামের পরিত্যক্ত ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে গৃহকর্তা জামিরুল ওই নারীকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকেই দুই নবজাতক ও মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির সময় ওই নারীর পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে।

তবে পিবিআই কর্মকর্তারা মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর সন্তানদের পিতৃপরিচয় শনাক্ত করতে পারেননি। পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা ওই নারীর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা দায়িত্ব নিতে রাজী হননি। এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওই নারী ও তাঁর দুই যমজ সন্তানের দেখভাল করে। সার্বক্ষণিক পরিচর্যার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুজন নারী আনসার সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন