মাদক সেবনের প্রতিবাদ করায় শাশুড়িকে হাত-পা বেঁধে মারধর, ঘরে আগুন

মাদক সেবনের প্রতিবাদ করায় শাশুড়িকে হাত-পা বেঁধে মারধর এবং ঘরে আগুন দেয় এক ব্যক্তি। সোমবার দুপুরে এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার কাগুজিরপুল এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাদক সেবনের প্রতিবাদ করায় শাশুড়িকে হাত-পা বেঁধে মারধর করেছেন এক ব্যক্তি। খবর পেয়ে শ্বশুর এসে ওই মারধরের প্রতিবাদ করায় ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এতে দুটি ঘর পুড়ে যায়। আজ সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার কাগুজিরপুল এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাগুজিরপুল এলাকার রফিক হাওলাদারের মেয়ে আঁখি বেগমের (২২) সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বিয়ে হয় মো. জয়নাল আবেদিনের ছেলে মো. ফয়সালের (২৭)। সম্পর্কে তাঁরা (আঁখি ও ফয়সাল) চাচাতো ভাই–বোন।

বিয়ের কিছুদিন পর ফয়সাল মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে যান এবং মাদক সেবন করেন। এ নিয়ে স্ত্রী, শ্বশুর ও শাশুড়ির সঙ্গে প্রায়ই কথা-কাটাকাটি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ফয়সালকে তাঁর শাশুড়ি নাসিমা বেগম মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা থেকে বের হয়ে অন্য কাজ করার জন্য বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফয়সাল তাঁর শাশুড়ি নাসিমার হাত-পা বেঁধে বেদম মারধর করেন।

খবর পেয়ে শ্বশুর রফিক হাওলাদার আসার আগেই সটকে পড়েন ফয়সাল। এ নিয়ে ফয়সালের মা মোছা. চান বানুর সঙ্গে রফিকের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে চান বানুকে মারধর করেন রফিক। পরে রফিক আহত স্ত্রী নাসিমাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান এবং চান বানুকেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাঁর স্বজনেরা। পরে বেলা দুইটার দিকে ফয়সাল এসে শ্বশুর রফিকের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান। ততক্ষণে রফিকের ঘর ও পাশে বাক্প্রতিবন্ধী মো. শাহ আলমের একটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মাদক মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। এর বাস্তব প্রমাণ ফয়সাল। আগুন দেখে মানুষ ডাক-চিৎকার করছে, আর ফয়সাল বলছিলেন পুড়ুক, সব শেষ হয়ে যাক।’

কয়েক মাস আগে ধারদেনা ও স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে ঘর উঠিয়েছেন শাহ আলম। তিনি নিজে শারীরিক প্রতিবন্ধী, তাঁর এক ছেলেও প্রতিবন্ধী। খুবই অভাবের সংসার। ঘরটি পুড়ে যাওয়ায় তাঁর সব শেষ হয়ে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত শাহ আলমের স্ত্রী নাসিমা বলেন, ‘এহন কই থাকমু, কী খামু? এর চেয়ে ঘরের লগে আমরা চাইরজন (স্বামী-স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে) পুইড়া মরলে আর চিন্তা করা লাগত না।’

ঘটনার পর থেকে ফয়সাল পালিয়ে আছেন। এ কারণে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফয়সালের স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফয়সাল একাধিকবার মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোণিত কুমার গায়েন বলেন, এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।