দাদনের টাকার জন্য নারীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় দাদনের টাকার জন্য নারী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে নূরে আলম (২৮) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নিহত ব্যক্তি ছেলে মো. মাসুম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন।

এর আগে গতকাল রোববার বেলা দুইটার দিকে উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের ইন্দাচুল্লি গ্রামে দাদনের টাকার জন্য ঘর থেকে ধরে এনে রাস্তার ওপর মোছা. বিলকিস নামের ওই নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম ও তাঁর ভাই সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ সময় ওই নারীর ছেলে মাসুমসহ অন্যরা বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।

আরও পড়ুন

অভিযুক্ত নূরে আলম ও সুজন মিয়া ইন্দাচুল্লি গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ইটখলার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। নূরে আলম শ্রমিকদের সরদার হিসেবে বিভিন্ন ইটখলায় শ্রমিক সরবরাহ করেন। তিনি গুনধর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। নিহত মোছা. বিলকিস (৩৭) ইন্দাচুল্লি গ্রামের আবদুল করিমের স্ত্রী।

মামলায় নূরে আলমকে (২৮) ১ নম্বর আসামি ও তাঁর বড় ভাই সুজন মিয়াকে (৩৫) ২ নম্বর আসামি করে অজ্ঞাতনামা আরও তিন থেকে চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সুজন মিয়াকে গতকাল রাতেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মামলার প্রধান আসামি এখনো পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামছুল আলম সিদ্দিকী।

ওসি শামছুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছেলে বাদী হয়ে নূরে আলম ও তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ঘটনায় জড়িত সুজন মিয়াকে স্থানীয় মরিচখালী বাজার থেকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার পরপরই নূরে আলম আত্মগোপন করেছেন। এখনো তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁর সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিলকিসসহ তাঁর পরিবারের সবাই চট্টগ্রামের একটি ইটখলায় কাজ করতেন। বর্ষাকালে ইটখলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসেন। বিলকিসের স্বামী আবদুল করিম গত বছর সুজনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা দাদন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা তিনি পরিশোধ করেন। বাকি ৬০ হাজার টাকার জন্য সুজন ও নূরে আলম গতকাল দুপুরে বিলকিসের বাড়িতে যান। তখন বিলকিসের স্বামী আবদুল করিম বাড়িতে ছিলেন না। পাওনা টাকা নিয়ে বিলকিসের সঙ্গে নূরে আলমের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নূরে আলম ক্ষিপ্ত হয়ে চুলের মুঠি ধরে বিলকিসকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় নিয়ে যান। তাঁকে কিলঘুষি, লাথিসহ লাঠি দিয়ে বেধড়কভাবে পেটান। মারধরের একপর্যায়ে নূরে আলম বিলকিসের গলা চেপে ধরলে ওই নারী অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

বিলকিসের ছেলে মো. মাসুম বলেন, মারধরের কারণে মা অচেতন হয়ে গেলে তিনি তাঁকে স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যান। সেখান থেকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। তিনি বলেন, মাকে মারার সময় নূরে আলমের হাতে-পায়ে ধরেছেন, বলেছেন টাকা দিয়ে দেবেন। কিন্তু তিনি শোনেননি। সবাইকে পিটিয়েছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাঁদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেননি।

আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

ইন্দাচুল্লি গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ ইটখলায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। দারিদ্র্যের কারণে তাঁদের অধিকাংশই দাদন চক্রে আবদ্ধ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে এলাকায় দাদন ব্যবসা করেন নূরে আলম। ঋণের টাকার জন্য অনেকেই তাঁর হাতে নির্যাতনের শিকার হন। বছরখানেক আগে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে তাঁর দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। শ্রমিকদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি অনেককে নির্যাতন করেন।

ঘটনার পর থেকে নূরে আলম গা ঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আইন অনুযায়ী যা হবে, তাতে তাঁদের সমর্থন থাকবে। কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় দল নেবে না।