দৌলতদিয়া ঘাটে ঈদফেরত মানুষের ভিড়, গরমে দুর্ভোগ

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাটে ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। আজ দুপুরে দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

ঈদের দুই দিন আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি মাগুরার শালিকায় যান শাকিব বিশ্বাস। তিনি গাজীপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আগামীকাল রোববার থেকে তাঁর অফিস খুলে যাবে। তাই আজ শনিবার সকালে তিনি মাগুরা থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

দুপুর ১২টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ঘাটে শাকিবের সঙ্গে আলাপ হয়। তিনি বলেন, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে মাহিন্দ্রায় করে তিনি ঘাটে পৌঁছান। ফেরিঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নামিয়ে দেওয়ায় হেঁটে প্রথমে যান ৫ নম্বর ঘাটে। পরে ৬ নম্বর ঘাটে ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস আর মানুষের ভিড় দেখে সেখানে ছুটে যান। গরমে গাদাগাদি করে ফেরিতে উঠতে বেশ কষ্ট হয়েছে।

ঈদের সপ্তাহব্যাপী ছুটি শেষে শাকিবের মতো অনেকেই কর্মস্থলের দিকে ছুটছেন। আজ সকাল থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটে মানুষের ভিড় দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। প্রখর রোদ আর গরমের কারণে কর্মস্থলমুখী মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন। তবে যাত্রীর চাপ থাকলেও ঘাটে পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি ও লঞ্চ রয়েছে বলে জানা গেছে।

সকালে লঞ্চঘাটে দেখা যায়, হাতে গোনা তিন-চারটি লঞ্চ রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রশাসনের লোকজনের তদারকির কারণে ঘাট থেকে কয়েকটি ফিটনেসবিহীন লঞ্চ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঘাটে লঞ্চের সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। প্রায় প্রতিটি লঞ্চে ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে।

লঞ্চঘাটের প্রবেশপথে কর্তব্যরত আনসার বাহিনীর কমান্ডার এমদাদুল হক বলেন, ঈদের পর দুই দিন ধরে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পার হচ্ছেন। রাস্তায় যেন কোনো রিকশা বা অটোরিকশা জটলা তৈরি করতে না পারে সে জন্য ঘাটের আগেই যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঘাটে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো
ছবি: প্রথম আলো

বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, ২২টি লঞ্চ থাকলেও ১৬টির মতো লঞ্চ চলছে। বাকি লঞ্চগুলো অন্য রুটে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে যতগুলো লঞ্চ আছে, সেগুলোই যথেষ্ট। যাত্রীদের সতর্কতার সঙ্গে নদী পাড়ি দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বাড়তি যাত্রী নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন।

দৌলতদিয়ার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট ঘুরে দেখা যায়, স্বল্পসংখ্যক যাত্রীবাহী পরিবহন ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কে অবস্থান করছে। তবে ছোট ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের চাপ রয়েছে। প্রতিটি ঘাটে ফেরি ভিড়লেই হুমড়ি খেয়ে যাত্রীরা উঠে পড়ছেন। যানবাহনের চাপ না থাকলেও ঢাকামুখী পরিবহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে।

গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক আবু কালাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বেশিরভাগ গাড়ি এখন পদ্মা সেতু দিয়ে চলছে। ঈদুল ফিতরের সময় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬৫ থেকে ৭০টি গোল্ডেন লাইনের গাড়ি ঢাকার দিকে গিয়েছে। তবে এই ঈদে দিনে ২৫-২৬টির মতো গাড়ি নদী পাড়ি দিচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ৮০১টি বাস, ৫৬৬টি পণ্যবাহী গাড়ি, ২২১২টি ছোট গাড়ি ও ১০৩৮টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে। পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে ৮৯৬টি বাস, ৪৭৭টি পণ্যবাহী গাড়ি, ১৭৬৪টি ছোট গাড়ি এবং ২২৪টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে। বর্তমানে এই নৌরুটে ছোট-বড় মিলে ১৬টি ফেরি চালু রয়েছে। ২১টি ফেরি থাকলেও গাড়ির চাপ না থাকায় অন্য ফেরিগুলো পাটুরিয়ায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।