সীমার পরিচালকের কোমরে দড়ি: প্রতিবাদে সীতাকুণ্ডে সব অক্সিজেন কারখানা বন্ধের ঘোষণা

সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়ার প্রতিবাদে জাহাজভাঙা শিল্পমালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএ’র সভা। গতকাল বিকেলে সীতাকুণ্ডের বানু বাজারে
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সব অক্সিজেন কারখানা আজ শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে জাহাজভাঙা শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)। সীমা অক্সিজেন কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করার প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসবিআরএ।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিএসবিআরএ’র সভাপতি আবু তাহের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল উপজেলার বানু বাজারস্থ বিএসবিআরএ’র কার্যালয়ে আয়োজিত সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করবেন সব অক্সিজেন কারখানার মালিক, জাহাজভাঙা শিল্পমালিক ও শ্রমিকেরা। পাশাপাশি আজ থেকে সীতাকুণ্ডের সব অক্সিজেন কারখানার উৎপাদন, পরিবহন ও সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। পারভেজ উদ্দিনের মানহানিকর অবস্থা সৃষ্টি করায় শিল্প পুলিশের দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার দাবি করা হয় সভা থেকে।

বিএসবিআরএ’র সদস্য আবুল কাশেম জানিয়েছেন, শুধু শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ থাকবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত অক্সিজেন সরবরাহ চালু থাকবে।

আরও পড়ুন

৪ মার্চ বিকেলে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকায় সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় সীমা অক্সিজেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিন ও দুই পরিচালকসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

এ মামলায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট এলাকা থেকে সীমা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সীমা অক্সিজেন কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে শিল্প পুলিশ। বুধবার তাঁকে কোমরে দড়ি বেঁধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আদালতে তোলা হয়। এরপর কোমরের দড়ি বাঁধার ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বিএসবিআরএ সভাপতি আবু তাহের প্রথম আলোকে বলেন, পারভেজ উদ্দিন একজন শিল্প উদ্যোক্তা। তিনি সম্মানিত ব্যক্তি। কোমরে দড়ি বেঁধে তাঁর মানহানি করা হয়েছে এবং এটি একটি গর্হিত কাজ করেছেন শিল্প পুলিশের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা। এতে শুধু পারভেজ উদ্দিনের মানহানি করেননি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের অপমান করা হয়েছে।

করোনাকালে অক্সিজেনের হাহাকারের সময় সীমা গ্রুপ হাজার হাজার সিলিন্ডার অক্সিজেন বিনা মূল্যে দিয়েছে দাবি করে আবু তাহের বলেন, বিস্ফোরণের পর হতাহতদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণ ২ লাখ টাকা থাকলেও সীমা গ্রুপ ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ১০ লাখ টাকা। আহত শ্রমিকদের ২ লাখ টাকা, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লাখ টাকা দিয়েছে। শ্রম আইনের থেকেও বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও সেই পরিমাণ সম্মান না দিয়ে উল্টো কোমরে দড়ি বেঁধে তাঁর মানহানি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

আবু তাহের বলেন, পারভেজ উদ্দিন জামিনে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সীতাকুণ্ডে সব অক্সিজেন কারখানার উৎপাদন, সরবরাহ ও পরিবহন বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া যেসব অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্য তাঁর মানহানি করেছেন, তাঁদের শাস্তির দাবিতে এবং পারভেজ উদ্দিনের মুক্তির দাবিতে আগামীকাল বেলা ১১টায় তাঁরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবেন।

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের চট্টগ্রামের পরিদর্শক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পারভেজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেনি। মামলা করেছে একটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে মাত্র। এ ক্ষেত্রে পারভেজ উদ্দিনের মুক্তির বিষয়টি একমাত্র আদালতের এখতিয়ারাধীন। এখানে শিল্প পুলিশের কিছু করার নেই। যেসব পুলিশ সদস্য পারভেজ উদ্দিনকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।