কুমিল্লায় কৃষকের শখের বশে লাগানো গাছে বিশ্বের ‘সবচেয়ে দামি’ মরিচ

কুমিল্লার কৃষক আহমেদ জামিলের শখের বশে লাগানো চারাপিতা মরিচ গাছে মরিচ ধরেছে। গতকাল শনিবার নগরের ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা নগরের ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি এলাকায় শখের বশে লাগানো বিশ্বের ‘সবচেয়ে দামি’ চারাপিতা মরিচগাছে মরিচ ধরেছে। কৃষক আহমেদ জামিলের তিনটি গাছে কয়েক শ মরিচ ধরেছে। দেখতে গোলাকার এ মরিচ কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের হলেও পাকলে হলুদ হয়ে যায়।

কৃষক জামিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে চারাপিতা জাতের মরিচের বীজ এনে শখের বশে নিজের বাড়িতে লাগান। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে আবাদ হওয়া এ জাতের মরিচে ঝাল কম। এটি সুগন্ধিজাতীয় মরিচ। বাংলাদেশের আবহাওয়া এ মরিচ চাষে উপযুক্ত কি না, সেটা গবেষণার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।

কৃষক আহমেদ জামিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সম্ভবত আমিই প্রথম এ মরিচের বীজ লাগাই। আমেরিকা থেকে বীজ সংগ্রহ করি। চার মাস আগে বস্তার ভেতর মাটি ভরে বীজ রোপণ করি। ৫০টি বীজের মধ্যে ৩টি বীজ থেকে চারা গজায়। একেকটি গাছ বুকসমান। তিন বছর পর্যন্ত এ গাছ থেকে মরিচ পাওয়া যাবে।’

কৃষক জামিলের দাবি, চারাপিতা মরিচ পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মরিচ। ১ কেজি মরিচের দাম ২৬ হাজার ডলার। অত্যন্ত সুগন্ধি এই মরিচ ধনীরা ব্যবহার করেন। আরব দেশের রাজা-বাদশাহরা তাঁদের খাবারে এই মরিচ ব্যবহার করতেন। মক্কার অনেক দামি হোটেলেও এটি ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, এ মরিচগাছে বৃষ্টির পানি পড়তে পারে না, কিন্তু রোদ লাগাতে হয়। সচরাচর এ বীজ দেশে পাওয়া যায় না। বাণিজ্যিক চাষও তেমন হয় না, তবে পেরুতে চাষ হয়। এটি মসলাজাতীয় মরিচ। এটির তেমন ঝাল নেই।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে আবাদ হওয়া এ জাতের মরিচে ঝাল কম। দেখতে গোলাকার এ মরিচ কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের হলেও পাকলে হলুদ হয়ে যায়
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শামসিল আরেফিন ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি সুগন্ধিজাতীয় মরিচ। এটি আমেরিকা মহাদেশে হয়। বাংলাদেশে তেমন হয় না। কৃষক জামিল শখের বশে লাগিয়েছেন। এখন তাঁর বাগানে তিনটি গাছে মরিচ ধরেছে।’

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি দামি মরিচ। দেখতে গোলাকৃতির। কৃষক আহমেদ জামিল প্রথম দফা বীজ বপন করে সফল হননি। দ্বিতীয়বারে বীজ লাগিয়ে মাত্র তিনটি গাছ টিকেছে। বাংলাদেশের জলবায়ু এটি চাষে কতটুকু সফল, সেটা নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। উনি এ মরিচ নিয়ে কয়েক বছর ধরে লেগে আছেন। এটি সাধারণত বেলে মাটিতে হয়। আমরা তাঁকে সহযোগিতা করেছি। চারাপিতা মরিচ আমেরিকার। গুগলে দেখে আমরা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছি মাত্র।’

এর আগে জামিল কুমিল্লার লালমাই উপজেলার নাওরা গ্রামে সাত একর জমিতে ব্ল্যাক (কালো) টমেটো চাষ করেন। এরপর তিনি সাউ পেরিলা (তেলবীজ) চাষ করেন। ৭০ একর জমিতে সাউ পেরিলাগাছ লাগান। এবার তিনি চারাপিতা মরিচগাছ লাগিয়েছেন।