ছাত্রলীগের সভাপতিসহ বহিষ্কৃত ১৩ শিক্ষার্থীর কেউ ক্যাম্পাসে নেই

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রার্থীদের অপহরণ ও আবাসিক হলে (ছাত্রাবাস) এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কৃত ও ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ১৩ শিক্ষার্থীর কাউকে ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। যদিও এখনো তাঁদের হল ছাড়ার আনুষ্ঠানিক নোটিশ দেওয়া হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের ১০০তম (বিশেষ) সভায় ওই ১৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আগে তাঁদের অধিকাংশই ক্যাম্পাস থেকে সটকে পড়েন।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক তানভীর ইসলাম বলেন, রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তের চিঠি রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে এখনো তাঁর দপ্তরে এসে পৌঁছায়নি। এ জন্য ওই শিক্ষার্থীদের হলছাড়া করার চূড়ান্ত নোটিশ এখনো দেওয়া হয়নি। তবে রিজেন্ট বোর্ডের সভার আগে ১২ জুন অছাত্র ও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।

অভিযুক্ত ১৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জনের ছাত্রত্ব নেই। যদিও তাঁরা ছাত্রাবাসে অবস্থান করতেন। বাকি ৯ জনের আবাসন–সুবিধা আছে। এর মধ্যে ছয়জনের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ক্যাম্পাসে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেউ মানেননি। তাঁরা ক্যাম্পাসের মধ্যে হলেই থাকছিলেন। এ জন্য এবারের নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সন্দিহান। যদিও এবার রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্তের পর ১৩ জনের কাউকে ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ১৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা, শহীদ মসিয়ূর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইছাদ হোসেন (শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী) ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বেলাল হোসেন আছেন। এ ছাড়া বাকিরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তবে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সল মনে করেন, সোহেল রানার শূন্যতায় সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তাঁর ভাষ্য, সংগঠন চলবে সংগঠনের গতিতে। কারও জন্য কোনো কিছু আটকে থাকবে না। তা ছাড়া কোনো ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না।

আরও পড়ুন

যদিও শাখা ছাত্রলীগের ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি সোহেল রানা, সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সলসহ আটজনেরই ছাত্রত্ব নেই। তিনজন পড়ালেখা শেষে চাকরি নিয়ে অনেক আগেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যে বিভক্তি আছে। দুই পক্ষের মধ্যে এক পক্ষে সোহেল রানা ও অন্য পক্ষে তানভীর ফয়সল নেতৃত্বে দেন। তাঁরা নিজেদের অনুসারী নিয়ে ক্যাম্পাসে আলাদা চলাফেরা করেন।

রিজেন্ট বোর্ডের সভায় গত বছরের ৭ ডিসেম্বর লিফট অপারেটর পদে চাকরি প্রার্থীদের অপহরণের ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবং ইতিমধ্যে জারি করা বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন, ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী জি এম রাইসুল হক রানা, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নৃপেন্দ্র নাথ রায়, মুশফিকুর রহমান, ফাহিম ফয়সাল ও মো. আবু বক্কারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের মধ্যে ফাহিম ফয়সালের বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া ৪ জুন রাতে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিন রহমানকে রাতভর নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় একই বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা, রেদওয়ান আহমেদ জিসান, মো. বিপুল সেখ, ইছাদ হোসেন, মো. আশিকুজ্জামান (লিমন) ও মো. আমিনুল ইসলাম; ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মো. বেলাল হোসেন ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মো. রায়হান রহমান রাব্বীকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের মধ্যে সোহেল রানা, ইছাদ হোসেন ও আশিকুজ্জামানের ছাত্রত্ব নেই। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রত্ব না থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

আরও পড়ুন