দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ, কর্তৃপক্ষ নির্বিকার 

মাঝিডাঙ্গা এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ও উন্মুক্তভাবে ময়লা ফেলায় এ এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচল ও বসবাস করা দুরূহ হয়ে পড়ছে।

বাগেরহাট পৌরসভার ময়লা ফেলা হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে। সম্প্রতি বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝডাঙ্গা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

‘গন্ধে ঘরে টেকা যায় না। দরজা–জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। তা–ও ঘরে থাকা যায় না। কোথায় যাব, খুবই অসহায় লাগে। মনে হয় ঘরবাড়ি বিক্রি করে অন্য কোথাও চলে যাই।’ ময়লার গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবেই দুর্ভোগ আর কষ্টের কথা বলছিলেন শেলী বেগম।

শেলী বেগমের বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের মাঝিডাঙ্গা এলাকায়। বাগেরহাট পৌরসভার ময়লাও ফেলা হয় ওই এলাকাতেই। স্থানটিতে অপরিকল্পিতভাবে ও উন্মুক্তভাবে ময়লা ফেলায় এ এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচল ও বসবাস করা দুরূহ হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবদুল জলিল বলেন, ‘ময়লার গন্ধে আমরা রোগাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। শান্তিতে খাবার খাওয়ারও উপায় নেই। পুরো এলাকাই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।’

মুনিগঞ্জ থেকে পোলঘাট সড়কের পশ্চিম পাশে মাঝিডাঙ্গা এলাকায় বড় একটা জায়গাজুড়েই ময়লার স্তূপ। পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান ভর্তি করে ময়লা এনে ফেলা হয় এখানে। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের পলিথিন, কাগজ, খাবারের উচ্ছিষ্টসহ নানা ধরনের ময়লার উটকো গন্ধ এলাকাজুড়ে। নিচু জায়গাটি ময়লা ফেলেই ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। ময়লার স্তূপের ওপর কুকুর, কাক ও বিভিন্ন ধরনের পাখি খাবার খাচ্ছে। দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা। হালকা বাতাসেই দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আরও দূর পর্যন্ত।

মো. রফিকুল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল-বিকেল কাজের জন্য এই পথ দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। এত পরিমাণ দুর্গন্ধ যে নাক চেপে দম বন্ধ করে যেতে হয়। খুবই কষ্ট হয় আমাদের।’

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৩ জুন ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাট পৌরসভার আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বর্জ্য ফেলার জায়গা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। বাগেরহাটের সে সময়কার জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস এর ফলক উন্মোচন করেছিলেন। তবে সাড়ে তিন বছরে ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া দৃশ্যমান আর কোনো কাজই হয়নি। উপরন্তু খোলা স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, পৌরসভার ময়লা ও আবর্জনা অপসারণ এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য ইতিমধ্যে ৫ একর জমি কেনা হয়েছে। ওই জমির চারদিকে উঁচু দেয়াল দিয়ে পৌর বর্জ্যকে আধুনিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে। এখানে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, কমপোস্ট সার প্ল্যান্ট, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

স্থানীয় একটি অটোরাইস মিলের শ্রমিক নাহার বেগম বলেন, ময়লা ফেলার স্থানের চারদিকে অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গন্ধে টেকা যায় না। বৃষ্টির সময় ময়লা ও ময়লাযুক্ত পানি রাস্তায় চলে আসার পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের বাড়িতেও প্রবেশ করে।