বাপহারা ছেলেটারে কত কষ্ট করে মানুষ করিছিনু। লেখাপড়া করাতে পারিনি। কিন্তু গায়ে খাটি সংসার চালাত। একন আমরা কার ভরসায় বাঁচপো?
জহুরা বেগম, আনোয়ারের মা

মুর্শিদা বেগম বলেন, ‘শবে বরাতের দিন সকালে আবদুল্লাহর বাপ হালুয়া-রুটি খাতে চাইল। বাড়িতে চাল-আটা ছিল না। সে বাজার থেকে চাল-আটা এনে দিয়ে বলল, দুপুরে বাড়িতে হালুয়া-রুটি খাব। কিন্তু সে আর বাড়িতে ফিরল না। রাত ১০টার দিকে শুনি বন্ধু অলি বকসের বাড়িতে আগুন নেভাতে গিয়ে সে পুড়ে গেছে। এত দিন চিকিৎসা চলছিল। ভাবিছিনু সে ভালো হয়ে বাড়িতে এলে হালুয়া-রুটি বানায়ে দিব। কিন্তু ওর বরাতে আর হালুয়া-রুটি খাওয়া হলো না। এখন আমি তিন ছেলেকে নিয়ে কী করব?’

মা জহুরা বেগম বলেন, ‘বাপহারা ছেলেটারে কত কষ্ট করে মানুষ করিছিনু। লেখাপড়া করাতে পারিনি। কিন্তু গায়ে খাটি সংসার চালাত। একন আমরা কার ভরসায় বাঁচপো?’

আজ সকালে বড়াইগ্রাম গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দগ্ধ ওলিউল্লাহ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে এসেছেন। তাঁর কপাল ও হাতে এখনো ঘা দগদগ করছে। গামছা দিয়ে সেই ঘা ঢেকে বন্ধুর বাড়িতে এসেছেন খাটিয়ায় শুয়ে থাকা বন্ধুর লাশ দেখতে। বাক্‌রুদ্ধ ওলিউল্লাহর দুই চোখ বেয়ে শুধুই পানি ঝরছে।

ওলিউল্লাহর ভাই আবদুস সামাদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে অলি বকস ও আনোয়ারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। অলি বাস চালাত। বাড়িতে এলে বেশির ভাগ সময় আনোয়ারের সঙ্গে কাটাত। তাঁর শ্বাসনালি পুড়ে গিয়েছিল। অনেক চেষ্টার পরও চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি।’

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক জানান, পরিবারের অনুরোধে আনোয়ারের লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।