সিলেট নগরে বন্যার পানি সরে যাচ্ছে, উপজেলা পর্যায়ে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত
কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি কম হওয়ায় সিলেট নগরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি সরে যাচ্ছে। এদিকে উপজেলা পর্যায়ে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ–নদীর বাঁধ ভেঙে ওই সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে আজ রোববার সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমারা ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটের জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে এবং পানি উপচে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিয়ানীবাজারের মুড়িয়া ইউপির সদস্য বদরুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বন্যার পানি গত কয়েক দিনের মতো একই জায়গায় রয়েছে।
উপজেলার বড়উধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ইসলামপুর গ্রামের কুনু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদের দিন থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। এর মধ্যেই তাঁর স্ত্রীর সন্তান হয়েছে। বন্যার কারণে কাজ নেই; রোজগারের পথও বন্ধ।
সিলেট নগরে জলাবদ্ধ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও মানুষের ভোগান্তি কমছে না। নগরবাসী ঘর থেকে বের হলেই পানিতে নেমে যাতায়াত করতে হচ্ছে। নগরের শাহজালাল উপশহর ডি ব্লক এলাকার বাসিন্দা ফাহাদ মো. হোসেন বলেন, ঘর ও সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। ঘর গোছাতে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, বৃষ্টি কমে আসায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আরও কয়েক দিন এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি
সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে নদীভাঙন রোধ ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জকিগঞ্জবাসীর উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ভারতের বরাক নদী থেকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উৎপত্তি হয়েছে। জকিগঞ্জে বরাক নদী থেকে সুরমা ও কুশিয়ার নদী ভাগ হয়েছে। যার ফলে দুই নদী দিয়েই ভারত থেকে ঢল নামে। এতে প্রতিবছর নদীতে ভাঙন হচ্ছে। প্রবল স্রোতে বাড়িঘর, ফসলি জমি, কৃষিজমি, কাঁচা-পাকা রাস্তা, গাছপালাসহ নানা স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সার্ক ইন্টারন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন ফারুকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন জকিগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি জামাল আহমদ। বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগকালীন ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ছয় দফা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সমন্বয়ক মাজহারুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন ইমদাদুর রহমান চৌধুরী, সেভ জকিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুখলিছুর রহমান।