মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ নেতা খুন, দাবি স্বজন ও নেতাদের
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রিদওয়ান আনসারির বাসায় গতকাল বুধবার বিকেলে ছুরিকাঘাতে খুন হন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকরাম আহমেদ (৩০)। রিদওয়ান আনসারির মামাতো ভাই রায়হানকে (২৭) মাদক সেবনে বাধা দেওয়ার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ইকরাম আহমেদের স্বজন ও ছাত্রলীগের দুজন নেতা দাবি করছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে রিদওয়ান আনসারি দাবি করছেন, তাঁর (রিদওয়ান) মোটরসাইকেলের চাবি চাওয়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ইকরাম খুন হয়েছেন।
গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিদওয়ান আনসারির বাড়িতে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ঘটনাস্থল সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বাসা থেকে রায়হানকে আটক করেছে পুলিশ। রায়হান ঢাকার মগবাজার এলাকার জিয়াউল হকের ছেলে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দাবি, রায়হান মাদকাসক্ত। এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইকরামের বাবা মাছুদ আহমেদ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নিহত ইকরাম সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের মাছুদ আহমেদের ছেলে। তবে ইকরাম পরিবারের সঙ্গে জেলা শহরের ডা. ফরিদুল হুদা সড়কের একটি বাড়িতে থাকতেন।
ইকরামের দুই স্বজন ও জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানোর জেরে এবং মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করেই ইকরামকে বুকে ছুরিকাঘাত করছেন রায়হান। এর আগে গত মঙ্গলবার ইয়াবা সেবন করায় রায়হানকে শাসন করেছিলেন ইকরাম। পরে রায়হানের মাদক সেবনের বিষয়ে রিদওয়ানের কাছে নালিশও করেছিলেন ইকরাম।
ইকরামের দুই স্বজন ও ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, রায়হানের মাদক সেবনের বিষয়ে গতকাল বিকেলে রিদওয়ানের বাসায় সালিস বসে। এ সময় রিদওয়ানের উপস্থিততেই ক্ষুব্ধ হয়ে ইকরামের বুকে ছুরিকাঘাত করেন রায়হান। কিন্তু মোটরসাইকেলের চাবি নেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইকরাম সাধারণত রিদওয়ানের মোটরসাইকেল চালাতেন না বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
অভিযোগের বিষয়ে আজ সকালে রিদওয়ান আনসারি বলেন, ‘রায়হান মাদকাসক্ত, এটা সত্যি। তাঁকে আমরা পুনর্বাসনকেন্দ্রে দিয়ে দেব, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে গতকাল বিকেলে ছুরিকাঘাতের সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম। হইচই শুনে বাসার নিচে নেমে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় ইকরাম বমি করছে। পরে জানতে পারলাম, রায়হান ও ইকরাম দুজনই আমার মোটরসাইকেল চালাত। বিকেলে মোটরসাইকেলের চাবি নিতে চেয়েছিল রায়হান। এ সময় বাধা দিলে ইকরামকে ছুরিকাঘাত করে রায়হান।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি রায়হানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়। রায়হানকে সেখানে পাঠানোর বিষয়ে রিদওয়ানকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ইকরাম। সেখানে পাঠানোর সময় গাড়ির ব্যবস্থাও ইকরাম করে দিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে রায়হান ফিরে আসেন। গত মঙ্গলবার রাতে শহরের মোড়াইল এলাকায় মাদকাসক্ত হয়ে রায়হান হইচই করেছিলেন। ওই সময় রায়হানকে শাসন করেছিলেন ইকরাম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহরাব আল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ইকরামের বাবা বাদী হয়ে রায়হানকে আসামি করে একটি অভিযোগ করেছেন। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।