পদ্মা সেতু দিয়ে মঙ্গলবার পরীক্ষামূলক চলবে বিশেষ ট্রেন

পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

পদ্মা বহুমুখী সেতু দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পরীক্ষামূলক একটি বিশেষ ট্রেন চলবে। পাঁচটি বগির বিশেষ ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে যাবে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে পরীক্ষামূলক এ রেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন।

এদিকে গত বুধবার পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করার কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেলপথ প্রস্তুত হয়েছে। এই ৪২ কিলোমিটার রেলপথে বিশেষ ট্রেনটি চলাচল করবে।

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের প্রকৌশলী (পদ্মা সেতু ও ভায়াডাক্ট অংশের ইনচার্জ) জহিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য সৈয়দপুর থেকে পাঁচটি বগির একটি ট্রেন ভাঙ্গা স্টেশনে আনা হচ্ছে। সোমবার রাত ১২টার দিকে তা ভাঙ্গায় পৌঁছে যাবে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রেলমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর চিপ হুইপ, সংসদ সদস্য, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, রেলওয়ে ও রেল লিংক প্রকল্পের কর্মকর্তাদের নিয়ে ট্রেনটি পদ্মা সেতুর দিকে যাত্রা শুরু করবে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিয়ারের কাছে গিয়ে আতশবাজি ফাটিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হবে। পদ্মা সেতু পেরিয়ে মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারের কাছে আবার আতশবাজি ফোটানো হবে।

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর। কাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা থেকে মাওয়া ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। পুরো ঢাকা-যশোরের এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।
যাত্রীদের ট্রেনে চলাচলের জন্য ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত চারটি স্টেশন ও একটি জংশন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাঙ্গা স্টেশন নির্মাণের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ, ভাঙ্গা জংশন স্টেশনের অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ, শিবচর জংশন স্টেশনের অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, পদ্মা স্টেশনের অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মাওয়া স্টেশনের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ শতাংশ।

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের মাওয়া স্টেশন থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথের ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। গত বছর ১ নভেম্বর ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রাপ্ত পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রেললাইনে ট্রেন চালানো হয়।

গত বছর ১৭ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সেতুতে কাজ করার অনুমতিপত্র তুলে দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এরপর ২০ আগস্ট পদ্মা সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু করা হয়। ওই দিন সেতুর লেয়ার ডেকে (নিচতলায়) রেল প্রকল্পের রেললাইন বসানোর জন্য আরসিসি ঢালাইকাজের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। এরপর ২৩ নভেম্বর সেতুতে রেলপথ বসানোর কাজ শুরু করা হয়।

পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার আমাদের আরেকটি স্বপ্ন জয়ের দিন। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চালানোর মধ্য দিয়ে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হবে।

পরীক্ষামূলক রেল চালানোর পরে কোথাও কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা ঠিক করা হবে। ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনে যাওয়ার পর রেলপথ মন্ত্রী ব্রিফিং করবেন। তিনি তখন জানিয়ে দেবেন কবে নাগাদ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। কখন থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী রেল চলাচল করবে।’