আসামি স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার ঘরে আবারও আগুন

বরিশাল নগরের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বাড়িতে দ্বিতীয় দফায় আগুন দেওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকেছবি: প্রথম আলো

বরিশাল নগরের কাউনিয়া এলাকায় যুবদল নেতা সুরুজ গাজীকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শাহীন হাওলাদারের বাড়িতে আবারও আগুন দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া হাউজিং এলাকার তাঁর টিনশেড ঘরে আগুন দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আসামি শাহীন হাওলাদার ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। অন্যদিকে নিহত সুরুজ গাজি একই ওয়ার্ডের যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, জমি বিক্রি নিয়ে বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত রোববার রাত আটটার দিকে কাউনিয়া শের-ই-বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে শাহীন ও সুরুজের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এর জেরে শাহীনের নেতৃত্বে কয়েকজন সুরুজকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। এ সময় তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে একই ওয়ার্ড যুবদলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নয়ন গাজীকেও কোপানো হয়। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের দুজনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সুরুজকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রোববার রাতে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন শাহীনের বাড়িতে আগুন দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনেন।

গতকাল বিকেলে বরিশাল সদর উপজেলার লামছড়ি গ্রামে জানাজা শেষে সুরুজের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান, সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার, সাবেক সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির, বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক প্রমুখ অংশ নেন।

গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে কাউনিয়া হাউজিং এলাকার শাহীন হাওলাদারের বাড়িতে আবারও আগুন দেন স্থানীয় লোকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান।

এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব শহিদুল হাওলাদার বলেন, ‘শাহীন দলের হাইব্রিড নেতা। দলের দুঃসময়ে সুরুজের ত্যাগ আছে। মূলত শাহীনের অপকর্মের প্রতিবাদ করা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগেও বিষয়টির সমাধানের জন্য তাঁরা উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে সুরুজকে হত্যা করা হয়। এটি আমাদের দলের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। শাহীন ও তাঁর গোটা পরিবার নগরের নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। আমরা এমন অপরাধী পরিবারের কঠোর শাস্তি চাই।’

আরও পড়ুন

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল কাউনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে সুরুজের পরিবার। এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শাহীন হাওলাদারসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে আরও সাত-আটজনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল নিশাত বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

শাহীনের বাড়িতে আবার আগুন দেওয়ার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘অন্ধকারের মধ্যে কারা আগুন দিয়েছে, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। অতি উৎসাহী নাকি বিক্ষুব্ধ জনতা আগুন দিয়েছে, তা তদন্ত না করে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’