সেই কারখানায় নেই কর্মচাঞ্চল্য, আতঙ্ক 

কারখানাটির শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায় করতে গিয়ে গত ২৫ জুন সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম।

গাজীপুরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে তিন দিনের মধ্যে কারখানার সব শ্রমিকের কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি হত্যাকাণ্ড বদলে দিয়েছে সব হিসাব–নিকাশ। ছুটি শেষে কারখানা চালুর ১৭ দিন পরও কাজে যোগ দেননি সব শ্রমিক। উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চলছে নতুন শ্রমিক নিয়োগের কার্যক্রম।

এই চিত্র গাজীপুরের টঙ্গীর প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের। এই কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায় করতে গিয়ে গত ২৫ জুন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন শ্রমিকনেতা শহিদুল ইসলাম। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি।

কারখানার কয়েকজন শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কারখানাটিতে বেতন-ভাতার সমস্যা অনেক আগে থেকেই। গত ছয়–সাত মাসে কখনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে শহিদুল হত্যার ঘটনায় অনেকের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে। তাই ছুটি শেষ হলেও অনেক শ্রমিক কাজে আসছেন না। অনেকে অন্য জায়গায় চাকরি নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬৫০। গতকাল বুধবার পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন ৪৯১ শ্রমিক। এর মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক ২০ জন। কারখানায় ঈদুল আজহার ছুটি হয় ২৮ জুন। ছুটি শেষে কারখানা চালু হয় ২ জুলাই। এর মধ্যে প্রথম সপ্তাহে শ্রমিক উপস্থিতি ছিল ২৭০ জনের মতো। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নানাভাবে বুঝিয়ে কাজে এনেছে।

কারখানাটি টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ি এলাকায়। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, মূল ফটকেও কড়াকাড়ি আরোপ করা হয়েছে। পাল্টে গেছেন নিরাপত্তাকর্মী। অপরিচিত কেউ এলেই জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু শ্রমিক জানান, কারাখানায় বেতন–ভাতা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয় গত এপ্রিল থেকে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আগের মাসের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও দেওয়া হতো ২০–২৫ তারিখে। কখনো এক মাস পর। এসব নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এর মধ্যে শহিদুলকে হত্যার ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঝামেলা এড়াতে অনেকেই কারখানায় আসছেন না।

এখনো কারখানার কাজে যোগ না দেওয়া এক নারী শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। চাকরি করি কয়ড্যা ট্যাক্যার লাইগ্যা। কিন্তু এই কারখানায় হেইডাও ঠিকমতো পাইতাম না। প্রতি মাসেই ঘরভাড়া, সন্তানগোর লেখাপড়ার খরচ নিয়া কষ্ট করতে হইতো। এর মধ্যে আমাগোর লাইগ্যা কাজ করতে আইসা এক ভাইও (শহিদুল) মইরা গেল। এসব ঝামেলা ভালো লাগে না। হেরলাইগ্যা আর কাজে যাই নাই।’

বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হলে কারখানার প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক আবু সালেহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কারখানায় বেতন-ভাতার একটা সমস্যা ছিল। আমরা সেটা ওভারকাম (অতিক্রম) করার চেষ্টা করছি। তবে শ্রমিকদের ভয় পাওয়ার বিষয়টা সত্য নয়। এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।’ তাহলে সব শ্রমিক কাজে আসছেন না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের পর তো, তাই হয়তো শ্রমিকেরা একটু সময় নিচ্ছেন। তবে সবাই এসে যাবেন।

শহিদুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৯

শহিদুল হত্যার ঘটনায় ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭ জনের নামে মামলা করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখনো চলছে তদন্ত কার্যক্রম।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মামলা তদন্ত তদারক কমিটির সভাপতি ইমরান আহম্মেদ বলেন, ঘটনাটি কেন ঘটল এবং কারা জড়িত, তা শনাক্ত করতে পেরেছি।’