টাঙ্গাইল শহরে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য, যানজটে ভোগান্তি

টাঙ্গাইল শহরের ব্যস্ত সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত যানজট হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শহরবাসীকে। ইজিবাইক দুই পালায় চলাচলের জন্য বলা হলেও অনেকে এ নিয়ম মানছেন না। গত মঙ্গলবার নিরালা মোড়ে
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইল শহরে প্রতিদিন তীব্র যানজট হচ্ছে। ১০ মিনিটের সড়ক পাড়ি দিতে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে। বাসিন্দারা বলছেন, শহরে অতিরিক্ত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এ ছাড়া কয়েকটি সড়কের উন্নয়নকাজ চলায় এ যানজট হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার যানজটের অবস্থা দেখতে বেলা ১১টার দিকে শহরের নতুন বাস টার্মিনাল থেকে ইজিবাইকে করে যাত্রা শুরু করেন এই প্রতিবেদক। নতুন বাস টার্মিনাল থেকে ইজিবাইক তিন মিনিট চলার পরই জেনারেল হাসপাতাল গেটে থেমে যায়। সামনের রিকশা থেকে যাত্রীরা নামছেন। তাই পেছনের রিকশাগুলো থেমে আছে। একই অবস্থা জেলা সদর গেট এলাকায়।

কুমুদিনী সরকারি কলেজের মোড়ে আসতেই আবার যানজট। এই মোড়েও যাত্রী নামছেন ইজিবাইক থেকে। এ ছাড়া রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্টেশন ও ইজিবাইক যেখানে সেখানে রেখে লোক ডাকছেন চালকেরা। একটু এগিয়ে যাওয়ায় পর সৃষ্টি স্কুলের মোড়ে যানজট দেখা গেল। সেখানে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ছুটির পর বের হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক রিকশা স্কুলের গলিতে ঢুকছে আর বের হচ্ছে।

পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, বড় কালীবাড়ি মোড়, নিরালা মোড় এলাকাতেও যানজটে পড়তে হয়। এরপর মেইন রোডে আধা কিলোমিটারও কম সড়ক অতিক্রম করতে লাগে আট মিনিট। নতুন বাস টার্মিনাল থেকে শান্তিকুঞ্জের মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। অথচ এই সড়ক ইজিবাইকে পাড়ি দিতে ১০ মিনিটের বেশি লাগার কথা নয়।

শহরের আদালত পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী লিটন সাহা জানান, সকাল থেকে শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ইজিবাইকের জট লেগে থাকে। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা যায় না।

কাগমারী এলাকার বাসিন্দা শাহিন চাকলাদার জানান, শহরের মেইন রোডের আধা কিলোমিটার সড়ক যেতে ১৫–২০ মিনিট লেগে যায়। যানজট নিরসনের জন্য ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

এদিকে শহরের ব্যস্ততম টাঙ্গাইল জেলা সদর সড়কে উন্নয়নকাজ চলছে। ওই সড়কে এখনো পিচঢালাই করা হয়নি। নিরালা মোড় থেকে জেলা সদর লেক পাড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারেও বেশি সড়ক খানাখন্দে ভরা। তাই এই সড়কে দু-একটি রিকশা ছাড়া কোনো যানবাহন চলছে না। ফলে অন্য সড়কগুলোয় চাপ বেড়েছে।

সরকারি এমএম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা জানান, এই শহরে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এখন এসব যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যানজট নিরসনের জন্য পৌরসভা ও ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল শহরে চলাচলের জন্য ৪ হাজার ২০০ ইজিবাইক ও ৫ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশার অনুমতি (লাইসেন্স) দেওয়া হয়েছে। যানজট এড়াতে ৪ হাজার ২০০ ইজিবাইক জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ করা হয়েছে। সকাল থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এক ভাগ এবং বেলা দুইটা থেকে রাত পর্যন্ত আরেক ভাগের ইজিবাইক চলাচল করার নির্দেশনা দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিয়ম মেনে চলছেন না ইজিবাইক চালকেরা। তাঁরা ইচ্ছেমতো যেকোনো সময় সড়কে নামছেন। ফলে বাড়ছে যানজট।

পৌরসভা সূত্র আরও জানায়, শহরের জেলা সদর সড়কের উন্নয়নের কাজ চলছে দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে। এই সড়কের যানবাহনের চাপ অন্য সড়কগুলোর ওপর পড়ছে। তাই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক জানান, ইজিবাইক দুই পালায় চলাচলের জন্য ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকে এ নিয়ম মানছেন না। এসব ইজিবাইকের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত পৌরসভা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি রাস্তার উন্নয়নকাজ চলছে। এসব রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে।

টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন জানান, অতিরিক্ত ইজিবাইক চলাচল করায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করছে।