চট্টগ্রামে জমজমাট আসবাব মেলায় দর্শনার্থীর ভিড়
সারি সারি স্টল-প্যাভিলিয়ন। খাট, চেয়ার, টেবিল, আলমারি—কী নেই এসব স্টলে। এর মধ্যে আসবাব বেচাকেনার বনেদি প্রতিষ্ঠান লিগ্যাসি ফার্নিচারে গিয়ে চোখ আটকে গেল। কারুকার্যখচিত কালো রঙের একটা সিন্দুক রাখা ছিল সেখানে। এটি ব্যবহার করা যাবে টেবিল হিসেবেও। এ কথা বললে ভুল হবে না যে ঘরের নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলবে সিন্দুকটি।
এ রকম নজরকাড়া সিন্দুক, খাট, ডাইনিং টেবিল, দোলনা, নানা নকশার চেয়ার কিনতে চাইলে যেতে হবে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে। সেখানে টেকসই ও আধুনিক সব আসবাব নিয়ে ছয় দিনব্যাপী মেলা চলছে। মেলার তৃতীয় দিনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেল। ক্রেতা, দর্শনার্থী ও বিক্রেতারা বলেছেন, মেলা জমজমাট হয়ে গেছে। চলছে বিক্রিবাট্টা।
এবারের মেলা শুরু হয়েছিল নতুন প্রত্যাশা নিয়ে। বিক্রি ও প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা—এমন পরিকল্পনা করেছে মেলার আয়োজক বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি চট্টগ্রাম বিভাগ। সমিতি জানিয়েছে, ২৭টি নামীদামি প্রতিষ্ঠান এক ছাদের নিচে পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে। মেলার মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি আসবাব ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
মেলা কমিটি ২০২৪-এর আহ্বায়ক মো. নুরুল আযম খান জানালেন, ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা মেলাতে ভিড় করছেন। স্টল-প্যাভিলিয়নে ঘুরে ঘুরে আসবাব দেখছেন। দামে মিলে গেলে কিনে নিচ্ছেন। ফলে মেলা জমে উঠেছে। এবারের মেলায় ১২টি প্রতিষ্ঠান সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা মেলা পরিদর্শন করতে পারছেন। কিনে নিতে পারবেন পছন্দের পণ্য।
টেকসই আসবাবের চাহিদা বেশি
লিগ্যাসিতে গিয়ে দেখা গেল, বাহারি সব পণ্য দিয়ে তারা প্যাভিলিয়নটি সাজিয়েছে। ভিক্টোরিয়ান সোফা, ডিভান, টিভি ক্যাবিনেট, প্যারাডাইজ মিরর, ব্রিঞ্জা চেয়ার—এ পণ্যগুলোর নকশা ক্রেতাদের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল। এই যেমন ব্যাংক কর্মকর্তা আহমেদ জারিফ ও সুমাইয়া সুলতানা দম্পতি। সদ্য বিবাহিত জারিফ ও সুমাইয়া লিগ্যাসির আসবাবগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন। এক ফাঁকে প্রথম আলোকে বললেন, ‘কী দারুণ নকশা প্রতিটি আসবাবের। চোখ আটকে থাকে। পাশাপাশি টেকসইও।
লিগ্যাসি ফার্নিচার চট্টগ্রামের মহাব্যবস্থাপক মো. শাহ আলমের কথায় মেলা জমে ওঠার আঁচ পাওয়া গেল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যত্ন নিয়ে পণ্যগুলো তৈরি করেন। বৈচিত্র্যময় আসবাবের সমাহার রয়েছে তাঁদের কাছে। দামও ক্রেতার হাতের নাগালে। আর মেলায় ক্রেতাদের দারুণ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
দুই যুগ আগে চালু হয়েছিল আসবাবের আরেক প্রতিষ্ঠান জেএমজি। প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুনাম ছড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির। এখন আধুনিক ও টেকসই আসবাব সরবরাহের কারণে তাদের সুনাম আরও গাঢ় হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির সাতটি শোরুম রয়েছে।
জেএমজির কর্ণধার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একটি ঘর মনের মতো করে সাজাতে যেসব আসবাব দরকার, তার সবটাই পাওয়া যায় জেএমজিতে। পাশাপাশি রয়েছে অফিসের আসবাব। ক্রেতারা টেকসই ও আকর্ষণীয় আসবাবের খোঁজ বেশি করেন। সেভাবেই তাঁরা চাহিদা মেটাচ্ছেন। মানের ক্ষেত্রে কোনো আপস তাঁরা করেন না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দিন দিন মানুষের বাসস্থান ছোট থেকে ছোট হচ্ছে। শহরে বড় বাড়ির চেয়ে ছোট ছোট ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা বাড়ছে। তাই ঘর সাজাতে মিনিমালিস্টিক ও ফিউশনধর্মী আসবাবের দিকেই ক্রেতারা ঝুঁকছেন। জায়গা কম লাগে এমন আসবাবের চাহিদা এখন বেশি। তা ছাড়া এক আসবাব বহু ব্যবহার করা যায়, এমন পণ্য কিনছেন ক্রেতারা।
নগরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সাবরিনা জান্নাত জানালেন, গত বছর মেলা থেকে দুটি চেয়ার কিনেছিলেন তিনি। এবার একটি বইয়ের তাক কিনতে চান। টেকসই কোনো পণ্যই কিনবেন।
সার্বিক বিষয়ে মেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. নুরুল আযম খান প্রথম আলোকে বলেন, সব সংকট পেছনে ফেলে সফলভাবে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাল ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থী আরও বেশি হবে বলে আশা করছেন তিনি।