ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল আউয়ালের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা। আজ রোববার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল আউয়াল নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। রোববার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি ২৮ দফা ইশতেহার নগরবাসীর উদ্দেশে তুলে ধরেন।

নির্বাচিত করলে ইশতেহারে থাকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে খুলনাকে একটি উন্নত, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দূষণমুক্ত শান্তির নগরী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন বলে আউয়াল দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তাঁর ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্বচ্ছতা আনয়ন, জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, শ্বেতপত্র প্রকাশ, নগরবিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন, নগর সরকার গঠনে কার্যকর উদ্যোগ, বায়ুদূষণ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, পানি সমস্যার সমাধান, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গঠন, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন, ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিল্ডিং কোডের যথাযথ অনুসরণ, দুর্যোগসহিষ্ণু নগর গঠন, স্মার্ট পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ।

এ ছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত ও পথচারীদের চলাচলের উপযোগী করা, আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট গড়ে তোলা, মশকনিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, খাল, জলাধার সংরক্ষণ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, হকার ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন, নারীবান্ধব গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলা, নাগরিকদের নৈতিক উন্নয়ন, জাকাত বোর্ড গঠন এবং সামাজিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা।

মেয়র প্রার্থী আউয়াল বলেন, মানবিক কারণে পায়ে চালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করা হবে। ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো ও ইজিবাইক; জ্বালানি তেলচালিত মাহিন্দ্রাসহ অন্য হালকা যানবাহনের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। কেবল প্রকৃত ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। খুলনা সিটির বিভিন্ন গাড়ির স্ট্যান্ড ও মালামাল ওঠানামার ঘাটগুলোতে চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে।

আউয়াল বলেন, ৩০ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। কেসিসির বর্ধিতকরণ প্রকল্পে যেসব নতুন এলাকা যুক্ত করা হয়েছে, সেসব এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স পাঁচ বছরের জন্য মওকুফ করা হবে। তাদের পানির লাইন বিনা খরচে দেওয়া হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন এলাকার রাস্তাঘাট ও সুয়ারেজ লাইন মানসম্মতভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে করা হবে।

আউয়াল বলেন, ইশতেহারে সিটি করপোরেশনের সব ক্ষেত্রে শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দুর্নীতি মূলোৎপাটন কর্মসূচি গ্রহণ, ভেজালমুক্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও ইনসাফপূর্ণ বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নগর-উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে।

বিগত মেয়রদের দেওয়া সব ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার অকার্যকর ও অন্তঃসারশূন্য ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে দাবি করে আউয়াল বলেন, আজ খুলনা সিটি বসবাসের অনুপযোগী একটি সিটিতে পরিণত হতে চলেছে। শিল্পাঞ্চল খুলনা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

ঘোষিত ইশতেহারে আউয়াল আরও বলেন, নোংরা রাজনীতির প্রভাব ও দৌরাত্ম্য থেকে খুলনা সিটিকে রক্ষা করতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরকে বসবাসের উপযোগী শান্তির নগরীতে পরিণত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আমূল পরিবর্তনের। দরকার ব্যাপক সংস্কারের। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের। প্রয়োজন সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্বের।

ইশতেহার ঘোষণায় মেয়র প্রার্থী বলেন, বিগত নির্বাচনগুলো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক না হওয়ায় এখনো জনমনে শঙ্কা, সংশয় ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। জনগণের সংশয় ও সন্দেহ দূর করতে না পারলে নির্বাচন থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। সাধারণ মানুষ যখন তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না, তখন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এ জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষকে আগ্রহশীল করে তুলতে হবে।

ইশতেহার ঘোষণায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, কেসিসি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মুফতি আমানুল্লাহ, সমন্বয়নকারী মুফতি ইমরান হুসাইন, নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক হাসিব গোলদার, অর্থ সমন্বয়কারী আবু গালিব, মিডিয়া সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল নোমান, গণসংযোগ সমন্বয়কারী মো. সাইফুল ইসলাম, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. ইমরান হোসেন মিয়া, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুর রশিদ প্রমুখ।