আমার ব্যর্থতা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, কিন্তু অংশ নিতে পারিনি: প্রধান বিচারপতি

কুষ্টিয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ‘মুক্তির মন্ত্র’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শনিবার বিকেলে খোকসা উপজেলা পরিষদ চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে যেতাম। ওনাদের (মুক্তিযোদ্ধা) কাছে অস্ত্র চালাতে শিখেছিলাম। মুক্তিযোদ্ধারা বলতেন, “তুমি ছোট। বাড়ি চলে যাও, তুমি মারা গেলে তোমার মায়ের কাছে কী কৈফিয়ত দেব।” আমি বাড়ি চলে গেলাম, যুদ্ধ করতে পারি নাই, কিন্তু নৃশংসতা খুব কাছ থেকে দেখেছি। মানুষের উৎসর্গটা কাছ থেকে দেখেছি। এসব দেখে আমার মনে খুব দাগ কাটে।’

আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা পরিষদ চত্বরে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ‘মুক্তির মন্ত্র’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির গ্রামের বাড়ি খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটা জাতির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ বারবার আসে না, একবারই আসে। আমার ব্যর্থতা এই মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, কিন্তু অংশ নিতে পারিনি। যেসব মানুষ স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন, তাঁদের স্মৃতি তুলে ধরতেই এই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির উদ্যোগ নিই। আমি নিজে লাশ দেখেছি। মন থেকে সরাতে পারি না।’

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়ির পাশে গড়াই নদের তীরে বসে থাকতাম। অনেক লাশ গড়াই নদে ভাসতে দেখেছি। আমি যখন প্রধান বিচারপতি হলাম, যখন আমার গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা উঠল, তখন পতাকার দিকে যতবারই তাকাই, ভেতরে লাল সূর্যটা আমাকে বারবারই স্মরণ করিয়ে দেয়, যাঁরা একাত্তরে এই পতাকার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন। তাঁদের কথা মনে করি।’

কুষ্টিয়ার খোকসায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ `মুক্তির মন্ত্র' উদ্বোধনের পর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। শনিবার বিকেলে খোকসা উপজেলা পরিষদ চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘এই বাঙালি চেতনাটাকে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে আসছিলেন, যেটা কমপেয়ার করা যায় একটা জীবন্ত আগ্নেয়গিরির মতো। এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে ৭ মার্চ তাঁর (বঙ্গবন্ধু) বক্তৃতায়। এই বক্তৃতায় তিনি সমগ্র জাতিকে একত্রিত করেন এবং আমরা স্বাধীনতা পেলাম। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা, পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব, খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির উদ্যোগ নেন। তাঁর চাচাতো ভাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আমানুর রহমানের পরিকল্পনায় মুক্তির মন্ত্র স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মুক্তির মন্ত্র বানানো হয়েছে। বাংলাদেশের মানচিত্রজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ছবি ও পাশে ভাষণ লেখা হয়েছে। পুরো চিত্রে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।