চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই কারাবন্দী বাবা-ছেলের জন্য জামিনের আবেদন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানচিত্র

প্রায় ১০ মাস কারাবন্দী থাকা বাবা ও ছেলের জন্য জামিনের আবেদন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (আমলি আদালত) এ জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী আশিক ইকবাল। আদালতের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আদালতের ওই সূত্র জানায়, ৬ মে ওই জামিনের আবেদনের শুনানির আদেশ দিয়েছেন ওই আদালতের বিচারক মো. আবু কাহার। ওই দিন যাঁদের জামিনের জন্য আবেদন করা হবে তাঁরা হলেন টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হওয়া দুটি মামলার আসামি গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউপির বিরামপাড়ার মো. হাফিজউদ্দীন (৬৮) ও তাঁর ছেলে মারুফ ইসলাম (২৪)।

আইনজীবীদের একটি সূত্র জানায়, গত রোববার আইনগত সহায়তা দিবসে প্রথম আলো অনলাইনে ‘বাদী আইনজীবী, কারাবন্দী বাবা-ছেলে পাচ্ছেন না কোনো আইনজীবী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর দুটি মামলার বাদী দুই আইনজীবীর বাবা সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নাজমুল আজম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে জজ আদালতের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারকের বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার নির্ধারিত আইনজীবী আশিক ইকবাল আদালতে বাবা-ছেলের জামিনের আবেদন জানান।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুটি মামলায় প্রায় ১০ মাস ধরে কারাগারে আছেন মো. হাফিজ উদ্দীন (৬৮) ও তাঁর ছেলে মারুফ ইসলাম (২৪)। এই সময়ের মধ্যে তাঁদের জামিনের আবেদন করা সম্ভব হয়নি। এই দুই মামলার বাদী আইনজীবী ও তাঁদের বাবা সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হওয়ায় আসামি বাবা-ছেলের জামিনের ব্যবস্থা করার জন্য পক্ষে কোনো আইনজীবী পাওয়া যায়নি।

কারা কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কাছে আইনজীবী নিয়োগের জন্য আসামিদের পক্ষে আবেদন জানায়। জেলা লিগ্যাল এইড (আইনগত সহায়তা) কমিটি একজন আইনজীবীকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু সেই আইনজীবীও আসামিদের পক্ষে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বাদী আইনজীবী হওয়ায়।

জানা গেছে, আসামি হাফিজ উদ্দীন ও তাঁর ছেলে মারুফ ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের বিরামপাড়ার বাসিন্দা। তাঁরা প্রায় ১০ মাস ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন। তাঁরা ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা আত্মসাতের দুটি মামলার আসামি। এ মামলার প্রধান আসামি মো. আকবর কারাবন্দী হাফিজ উদ্দীনের জামাতা। আকবর সচ্ছল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের তিন পরিচালকের একজন। এই সমিতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জজকোর্টের পিপি নাজমুল আজমের স্ত্রী বেগম রোকেয়া ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা জমা রাখেন। ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন নাজমুল আজমের দুই ছেলে। তাঁরাও পেশায় আইনজীবী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য।

হাফিজ উদ্দীনের স্ত্রী রাবিয়া বেগম স্বামী ও ছেলের পক্ষে আইনজীবী এবং আদালতে আবেদনের জন্য মামলার কপি পেতে গত ২১ মার্চ ডাকযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সোলায়মান বিশুর কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন।

ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই থেকে রাবিয়া বেগমের স্বামী ও ছেলে জেলা কারাগারে বন্দী। টাকা আত্মসাতের সঙ্গে বা সচ্ছল সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির সঙ্গে তাঁর স্বামী কোনোভাবেই জড়িত নন। ছেলে সমিতির একজন মাঠকর্মী মাত্র। মামলায় তাঁদের দায়ী করে পুলিশ এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি। জেল সুপারের মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল কর্মকর্তার কাছে আইনজীবী নিয়োগের আবেদন জানানো হলে লিগ্যাল এইড অফিস থেকে আইনজীবী আবু হাসিবকে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়। তবে আবু হাসিবও মামলা পরিচালনা করতে লিখিতভাবে বিব্রত বলে জানান।

আরও পড়ুন