এবার মনোনয়নের ভিন্ন লড়াই চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে

২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হন।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে নির্বাচনের আগেই মনোনয়নকে ঘিরে ভিন্ন লড়াই শুরু হয়েছে। জোটের কারণে আওয়ামী লীগ টানা তিনবার এখানে নিজেদের প্রার্থী দিতে পারেনি। ছেড়ে দিতে হয়েছে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট, নতুন রাজনৈতিক দল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, সরকারের ইশারায় তাঁরা নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকে হাটহাজারী আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তা মানতে নারাজ। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরীসহ ১৪ জন দল থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা–কর্মীরাও চান, দল থেকে এবার প্রার্থী দেওয়া হোক। কিন্তু জোটগত কারণে এবারও আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দিতে পারে।

হঠাৎ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাড়ি হাটহাজারীতে।

হাটহাজারীর ১৬টি ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ও ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী সংসদীয় আসন।

২০০৮ সালের আগের নির্বাচন পর্যন্ত হাটহাজারী আসনটি বিএনপির ছিল। ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হন। প্রতিবারই আওয়ামী লীগ থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু জোটের কারণে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে আসনটি দিয়ে দিতে হয়। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এক বছর ধরে প্রকাশ্যে সভায় তাঁরা বলে আসছেন নিজ দল থেকে প্রার্থী দিতে। গত শুক্রবার দুপুরে হাটহাজারী সদর এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রায় ২০ জন নেতা–কর্মীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁদের একটাই বক্তব্য, আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করেছে। সেখানে অন্য পার্টির লোককে কেন দাঁড় করাতে হবে। হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সবার চাওয়া দল থেকে প্রার্থী দেওয়া হোক।

এই বিষয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে শুক্রবার রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবারই অনেকে অনেক কথা বলেন। এবার দেখা যাক। তবে হাটহাজারীর লোকজন তাঁকে চান বলে দাবি আনিসুলের। তাই এবারও তিনি নির্বাচন করবেন।

হঠাৎ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাড়িও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এই আসন থেকে বিএনপির সঙ্গে জোটে নির্বাচন করেছিলেন। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের জোট ছেড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে হাটহাজারী উপজেলা বিএনপি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাটহাজারীসহ দেশের যেকোনো আসন থেকে নির্বাচন করতে পারি।’

এবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনী কৌশল হিসেবে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ‘কিংস পার্টি’র প্রার্থীদেরও কয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।

কিংস পার্টিখ্যাত এসব দল থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আলোচনা রয়েছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ভিপি নাজিম উদ্দিন গত অক্টোবরে ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম’ নামের নতুন দল গঠন করেন।

প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের নতুন দল নিবন্ধন পায়নি। তাই তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন।

হাটহাজারী থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ বছর ধরে নৌকা প্রতীকে অন্য পার্টির লোক এমপি নির্বাচিত হচ্ছেন। এবার নেতা–কর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। তাঁদের সবার চাওয়া, বাইরে থেকে নয়, দল থেকে প্রার্থী দেওয়া হোক। তা না হলে সবাই চরম হতাশ হবেন।