মৌলভীবাজারে ক্রেতারা গরু কিনে রেখে গেছেন খামারেই
খামারের শেডের দিকে তাকালে মনে হবে গরুগুলো বিক্রির অপেক্ষায় আছে। দু–এক দিনের মধ্যে এগুলো স্থানীয় হাটবাজারে তোলা হবে। কিন্তু বাস্তবে কোরবানির স্থানীয় পশুর হাট জমে ওঠার আগেই খামারের এই গরুগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। ক্রেতারা গরু কিনে খামারেই রেখে গেছেন। ঈদের দু–এক দিন আগে ক্রেতারা তাদের কেনা কোরবানির গরু নিয়ে যাবেন।
মৌলভীবাজারের আরিয়ান ডেইরি ফার্মের ১০০ গরুর মধ্যে ৮৫টি গরু এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এই ফার্মে ওজন–পদ্ধতিতে গরু বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা গরু পছন্দ করছেন, তারপর ওজনে যে দাম আসছে, তা পরিশোধ করে দিচ্ছেন। খামার মালিকও গরু বিক্রি করে স্বস্তিতে সময় পার করছেন। যে কয়টি এখনো বিক্রি হয়নি, তা–ও দু–এক দিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে।
গত সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শহরতলির মোস্তফাপুরে আরিয়ান ডেইরি ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, গরু রাখার শেডগুলোতে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন রং ও আকারের গরু বাঁধা আছে। দেখে মনে হয়েছে, গরুগুলো বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। দু–এক দিনের মধ্যে গবাদিপশুর স্থানীয় হাট জমে উঠবে। এগুলোকে এসব হাট–বাজারে তোলা হবে। এর মধ্যে চেনা-অচেনা দু-চারজন ক্রেতাকেও দেখা গেল, তাঁরা খামার মালিকের সঙ্গে আলাপ করছেন। কোনো ক্রেতা কোরবানির জন্য গরু পছন্দ করেছেন, সেটির ওজন মাপা হচ্ছে। শান্ত ও নিরিবিলি একটা পরিবেশ বিরাজ করছে থামারে।
সারা বছরই খামার থেকে গরু বিক্রি হয়। তবে ঈদ সামনে রেখে বেশি লালন–পালন করা হয়। বাজার জমার আগেই বিক্রি প্রায় শেষ।সৈয়দ ফয়সল আহমদ, খামার মালিক, সুনামগঞ্জ
আরিয়ান ডেইরি ফার্ম সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দ ফয়সল আহমদ ২০১৮ সালে মোস্তফাপুরে নিজের বাড়িতেই এই খামার গড়ে তোলেন। শুরুতে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। গরু রাখার জন্য ছোট-বড় চারটি শেড আছে খামারে। সারা বছরই শিরনি, বিয়েসহ নানা উৎসবে কমবেশি তাঁর খামারের গরু বিক্রি হয়। তবে বড় আয়োজনটা থাকে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে। গত বছর কোরবানির ঈদের পরপরই খামারের জন্য দেশি, শাহিওয়াল, ব্রাহমি ক্রস জাতের গরু কেনা শুরু হয়। এ রকম প্রতিবছরই কোরবানির ঈদের পর স্থানীয় দীঘিরপাড় বাজার, সরকার বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার থেকে এক থেকে দেড় বছরের ছোট গরু তাঁরা কিনে নিয়ে আসেন। এরপর নিজেরাই এগুলোর লালন–পালন করেন। সারা বছর কুঁড়া, খইল, ভুসি ও ঘাস গরুকে খাওয়ানো হয়। এই গরু দেখাশোনা করার জন্য নিয়মিত ছয়জন কর্মী কাজ করেন। এ বছর ১০০ গরু কোরবানির জন্য লালন–পালন করা হয়েছে। এতে তাঁর বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকায়। এদিকে মৌলভীবাজার শহর-শহরতলির কোরবানির গরুর হাট এখনো জমে ওঠেনি। বিভিন্ন হাট মাত্র শুরু হয়েছে। কিন্তু তার আগেই আরিয়ান ডেইরি ফার্মের বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮৫টি গরু বিক্রি হয়ে যায়।
তবে বিক্রি হওয়া গরুগুলো খামারেই রয়ে গেছে। ক্রেতারা ঈদের দু–এক দিন আগে এসে তাঁদের গরু নিয়ে যাবেন। এই কদিন লালন–পালনের খরচও ক্রেতারা বহন করেন। প্রতিটি গরুর জন্য বাড়তি এক হাজার টাকা করে পরিশোধ করেন ক্রেতারা। এতে বাসাবাড়িতে গরু নিয়ে রাখার ঝামেলায় পড়তে হয় না ক্রেতাদের। গরু বিক্রির পদ্ধতিও হাট-বাজারের মতো থোক দরদাম করে হচ্ছে না। ক্রেতারা তাদের বাজেট ও চাহিদা অনুযায়ী গরু পছন্দ করেন। তারপর ওজনে যা আসে, সেই হিসেবে টাকা পরিশোধ করেন। এ ক্ষেত্রে এবার সাধারণ দেশি গরুর প্রতি কেজির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯০ টাকা এবং শাহিওয়াল ৫১০ টাকা করে।
আরিয়ান ডেইরি ফার্মের কর্মী মো. রুমেল মিয়া প্রথম আলোকে জানান, যে গরু দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি আছে বিক্রির বাকি। আর সব বিক্রি হয়ে গেছে। ১ জুন থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। ঈদের এক বা দুই দিন আগে ক্রেতারা এসে নিয়ে যাবেন। ক্রেতার পছন্দের পর ওজন দেওয়া হয়। ক্রেতার মধ্যে মৌলভীবাজার শহর, শহরতলিসহ কুলাউড়া, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকার ক্রেতাও আছেন।
খামার মালিক সৈয়দ ফয়সল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা বছরই খামার থেকে গরু বিক্রি হয়ে থাকে। তবে ঈদ সামনে রেখে বেশি গরু লালন–পালন করা হয়। হাট-বাজার জমার আগেই আমাদের গরু বিক্রি প্রায় শেষ। আমাদের এখানে গরু কেনায় কোনো ঝামেলা নেই।’