পঞ্চগড়ে গ্রামবাসীর পিটুনিতে আহত মহাবিপন্ন বনরুই উদ্ধার

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ নজিরতন উচ্চবিদ্যালয় মাঠ থেকে আহত বনরুই উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকেছবি : সংগৃহীত

রাতের আঁধারে বিদ্যালয়ের মাঠে ছুটোছুটি করছিল কালো রঙের একটি প্রাণী। এটিকে দেখে ভয় পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন লাঠি নিয়ে তাড়া করেন; দেন বেদম পিটুনি। মারা গেছে ভেবে সেখানে ফেলে রাখা হয় প্রাণীটিকে।

ওই ঘটনার খবর পেয়ে ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিমের প্রতিষ্ঠাতা সহিদুল ইসলাম সেখানে গিয়ে প্রাণীটি বনরুই বলে শনাক্ত করেন। পরে তিনি বনরুইটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ নজিরতন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত বনরুইটি সাহিদুল ইসলামের পরিচর্যায় এখন সুস্থ আছে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষিত এই প্রাণীকে বন বিভাগের মাধ্যমে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। উদ্ধার হওয়া কালো রঙের বনরুইটির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই ফুট আর ওজন ৬ কেজি।

কালিয়াগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, ‘গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে কালিয়াগঞ্জ নজিরতন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বসে কয়েকজন গল্প করছিলেন। এ সময় পাশের পুরোনো গোরস্তানের দিক থেকে মাঠে আসা একটি কালো রঙের অচেনা প্রাণী দেখে তাঁরা প্রথমে কিছুটা ভয় পান। এতে তাঁরা লাঠি এনে প্রাণীটিকে মারধর করছিলেন। পরে আমি তাঁদের বাধা দিয়ে বন্য প্রাণী উদ্ধারকারী সহিদুল ইসলামকে মুঠোফোনে খবর দিই। পরে আমরা গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি, এটি বনরুই। পরে সহিদুল ইসলাম প্রাণীটিকে নিয়ে গেছেন।’

ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি মুঠোফোনেই তাঁদের মারধর না করতে অনুরোধ করি। পরে গিয়ে দেখি বনরুইটি রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ভেবেছিল, প্রাণীটি মারা গেছে। প্রাণীটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এটি এখন সুস্থ আছে। এরই মধ্যে আমি বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা এসে আজ (মঙ্গলবার) প্রাণীটিকে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।’

সহিদুল ইসলাম আরও বলেন, মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষিত বনরুই সাধারণত বিভিন্ন গোরস্তান ও বাঁশঝাড়ের মাটির গর্তে বসবাস করে। বনরুই পিঁপড়া ও পিঁপড়ার ডিম, উইপোকার ডিম খেতে পছন্দ করে। স্থানীয় লোকজন এর আগে এই এলাকায় এ ধরনের প্রাণী দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে পঞ্চগড়ের লোকালয়ে বনরুই ধরা পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে তিনি জানান।

দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফাহিম মাসউদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া বনরুইটিকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঢাকায় বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।