বরিশালের দুই আসনে মেননের প্রার্থিতায় মহাজোটে ‘জট’

রাশেদ খান মেনন
ফাইল ছবি

বর্ষীয়ান নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশালের দুটি আসনে আকস্মিক প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে মনোনয়ন নিয়ে জটের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মহাজোটকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বেশ টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি। দলটির শীর্ষ নেতা রাশেদ খান মেনন আগে ঢাকা-৮ আসনে তিন দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন পান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এ কারণে মেননের আসন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়।

রাশেদ খান মেননের পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় হলেও তিনি জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে তিনি নিজ এলাকা থেকে দুবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এরপর নিজ এলাকা থেকে তিনি আর নির্বাচনে অংশ নেননি। এবার আকস্মিক তিনি বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

বরিশাল-৩ আসনে ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. টিপু সুলতান। ২০১৮ সালে টিপু সুলতান মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু। এবারও এখানে টিপু সুলতান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

একইভাবে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাপার বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপুও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বাবুগঞ্জ উপজেলা সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেনকে। রাশেদ খান মেনন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় মহাজোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ একটু জটিল হলো।

রাশেদ খান মেনন এই আসনে মনোনয়নপত্র নেওয়ার খবরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস কমেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা বলেছেন, ২২ বছর পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে যাওয়ায় তাঁরা খুব আনন্দিত হয়েছিলেন। এখন সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে। মহাজোটের কারণে ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আফজালুল করিম মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সরদার মো. খালেদ হোসেন বলেন, ‘দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করব।’

বরিশাল-২ আসনেও একইভাবে জট বেঁধেছে মহাজোটে। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার ইউনুসকে। মহাজোটের শরিক জাপার চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন (তাপস) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আছেন ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থীও। এমন পরিস্থিতিতে শেষ সময়ে সেখানে রাশেদ খান মেননের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার ইউনুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে দলকে বাঁচাতে হবে। আমাকে এখানে মনোনয়ন দেওয়ার পর সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে, সেটা অভাবনীয়। এখন তার ব্যত্যয় হলে যে হতাশা নেমে আসবে, তার প্রতিফলন ফলাফলে প্রভাব ফেলবে।’

মুলাদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে জোটকে আসন ছেড়ে দেওয়ায় সংসদ সদস্য হন ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ মো. টিপু সুলতান। ২০১৮ সালে আবারও ছাড় দেওয়ায় জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু সংসদ সদস্য হন। বারবার জোটের শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়ায় এই দুই উপজেলায় তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি, দলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির একটি সূত্র জানায়, মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আসনবিন্যাসের ব্যাপারে আগেই উদ্যোগ নিলে এমন জটিলতার সৃষ্টি হতো না। এখন যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসন করা একটু কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।

ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে এই জটিলতার সমাধান হবে। ঢাকা–৮ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখন সমস্যা সমাধানে উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। শিগগিরই এর সমাধান হবে।’

রাশেদ খান মেনন ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।