বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে: মির্জা ফখরুল

‌বিএন‌পির ‘তারু‌ণ্যের রোডমার্চ’ কর্মসূ‌চি শেষে দিনাজপুরে জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন দ‌লের মহাস‌চিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ‌নিবার বি‌কে‌লে দিনাজপুর শহ‌রের বটতলী এলাকার ট্রাক টা‌র্মিনাল মা‌ঠে
ছ‌বি: প্রথম আ‌লো

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। বিগত দুটি নির্বাচন রাতের আঁধারে আয়োজন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে বর্তমান সরকার। ভবিষ্যতেও একটি পাতানো নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নিজেদের ইচ্ছেমতো জেলায় জেলায় ডিসি-এসপি (জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার) পদায়ন করছে সরকার।’

শনিবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর শহরের বটতলী এলাকার ট্রাক টার্মিনাল মাঠে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ কর্মসূচি শেষে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে এ রোডমার্চ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল আলম, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দিনাজপুর ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা। সমাবেশস্থলের পাশেই চেহেলগাজী মাজার ও একাত্তরের বীর শহীদেরা ঘুমিয়ে আছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের বাড়িও এই জেলায়। তেভাগা আন্দোলনের জনপদ এই দিনাজপুর। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই জেলার মানুষ তাঁদের অধিকার আদায় করতে জানেন। কয়েক বছর ধরে আমরা বলে আসছি, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আজকে শুধু বিএনপি নয়, সরকারের শরিক দলসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল এমনকি পৃথিবীর প্রায় সব দেশ বলছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ নীরবে ধ্বংস হয়ে গেছে। অতীতের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে। অংশীদারত্বমূলক হতে হবে।’

আরও পড়ুন
বিএন‌পির ‘তারু‌ণ্যের রোডমার্চ’ কর্মসূ‌চিতে নেতা–কর্মীরা। শ‌নিবার বি‌কে‌লে দিনাজপুর শহ‌রের চে‌হেলগাজী এলাকায়
ছ‌বি: প্রথম আ‌লো

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায় ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে মাঠশূন্য করার পাঁয়তারা করছে। ভোটের অধিকার আমাদের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার আদায়ে কারও ওপর বিএনপি নির্ভরশীল নয়। তারুণ্যের নেতৃত্বে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। সরকারের পতন ঘটিয়ে সুষ্ঠু ভোটের আয়োজন করব। ভয়াবহ একনায়কতন্ত্র, স্বৈরাচার, লুটেরা দলের বিরুদ্ধে তারুণ্যের শক্তিই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রংপুর থেকে এই রোডমার্চ শুরু হলো। এই রোডমার্চ শেষ হবে সেদিন, যেদিন আমরা এই সরকারের পতন ঘটাতে পারব। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’

আরও পড়ুন

রংপুরে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধনের পর গাড়িবহর নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা করেন বিএনপির মহাসচিব। এ সময় রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট জেলার নেতা-কর্মীরা বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলে মহাসচিবের সঙ্গে দিনাজপুরে আসেন।

বেলা পৌনে দুইটায় সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছায় রোডমার্চ। সেখানে অপেক্ষমাণ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি বলেন, ‘মানুষের ভোটের অধিকার ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারুণ্যের মিছিলে রাজপথে নেমেছি। জনগণ সরকারকে আর একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না। বিএনপি সরকারের পাতানো নির্বাচনে যাবে না।’ এ সময় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

আরও পড়ুন
ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে রংপুর থেকে তারুণ্যের রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। শনিবার দুপুরে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ইসলামবাগ এলাকায়
ছবি: মঈনুল ইসলাম

বেলা সোয়া তিনটার দিকে রোডমার্চটি দিনাজপুরের রানীরবন্দর এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে দিনাজপুরে জনসভাস্থলের উদ্দেশে রওনা করেন মির্জা ফখরুল। এর আগে দুপুর ১২টা থেকে দশমাইল এলাকায় পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা দুইটার মধ্যে ভূষিরবন্দর-দশমাইল থেকে জনসভাস্থল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে স্লোগান দিতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। বিশাল গাড়িবহর নিয়ে বিকেল পাঁচটায় রোডমার্চটি দিনাজপুর ট্রাক টার্মিনালে পৌঁছানোর পর জনসভা হয়।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুটি রোডমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর একটি ছিল শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ। রোববার বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত তারুণ্যের রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল।