জরাজীর্ণ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফার্মাসিস্টেই ভরসা কয়রার বেদকাশীর মানুষের
দেয়ালের পলেস্তারা খসে বেরিয়ে গেছে ইট। একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। দরজা-জানালা খুলে পড়ে গেছে অনেক আগে। ওপরের টিনশেডটিও ভাঙাচোরা। দীর্ঘ দিন ধরে কোনো চিকিৎসক না থাকায় নামসর্বস্ব রোগী দেখেন ফার্মাসিস্ট। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। দেখলে মনে হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিজেই রোগাক্রান্ত। খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের কয়রা-বেদকাশী উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের এখন এমনই দশা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়রা সদর থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে হওয়ায় ১৯৮২ সালে সদর ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকায় উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুর দিকে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে সদর, উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মানুষ ছাড়াও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসতেন। তবে বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বেহাল। এখানে চিকিৎসা কর্মকর্তা পদে দুই বছর ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে ছয় বছর ধরে নিয়োগ না হওয়ায় ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে কেন্দ্রটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি জরাজীর্ণ ভবনে মরিচা ধরা টিনের ছাউনির মধ্যে আকাশ দেখা যাচ্ছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে ইট বেরিয়ে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। জরাজীর্ণ একটি কক্ষে বসে রোগী দেখছেন এক ব্যক্তি। পাশের বেঞ্চে বসে আছেন কয়েকজন রোগী। ভেতরে ঢুকে জানা গেল, তিনি চিকিৎসক নন, ফার্মাসিস্ট।
ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া ফার্মাসিস্টের নাম শশংক কুমার রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো চিকিৎসক না থাকায় আমি রোগী দেখি। তা–ও ভালোভাবে বসার ব্যবস্থা নেই। এখানে ৩৭ ধরনের ওষুধ আছে। সেগুলো রোগীরা পান। আমি রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিই।’
চিকিৎসা নিতে আসা কয়রা সদরের হরিণখোলা গ্রামের তৈয়েবুর রহমান বলেন, এটা নামে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। এখানে একজন ফার্মাসিস্ট ছাড়া কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। বাধ্য হয়ে তাঁকে দেখিয়ে ওষুধ নিতে হয়। কখনো ভালো হয়, আবার কখনো বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়।
স্থানীয় মদিনাবাদ গ্রামের অমল কৃষ্ণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি একেবারে ভাঙাচোরা। ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়েছি। টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে পাশের একজনের বাড়িতে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করেছি। চিকিৎসকেরাও থাকেন না। যিনি আছেন, বেলা দুইটার পর তাঁকে পাওয়া যায় না।’
কয়রার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, এলাকার মানুষের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেবা নেওয়া অনেক কষ্টের। বর্তমানে চিকিৎসক না থাকায় উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা পেতে মানুষের খুব দুর্ভোগ হচ্ছে। ভবনটি পুনর্নির্মাণ ও চিকিৎসাসেবা চালুর বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। মাসিক সভায়ও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসক, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন অফিস সহায়ক থাকার নিয়ম আছে। যাঁরা সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে অবস্থান করবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল হুদা খান বলেন, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একজন ফার্মাসিস্ট আছেন। কাগজে-কলমে ফার্মাসিস্টদের রোগী দেখার সুযোগ নেই। কেন্দ্র পরিচালনার স্বার্থে কিছু মৌলিক ওষুধ তাঁদের দেওয়া হয়। আগত রোগীদের তাঁরা সেগুলো দেন। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য মেডিকেল অফিসার ও নতুন ভবন চেয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।