কারাগারে বৃদ্ধ বাবাকে ওষুধ দিতে গিয়ে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দুই ছেলে

বাবা ইসহাক ভূঁইয়ার (ডানে) দুই ছেলে নয়ন ভূঁইয়া (মাঝখানে) এবং সুমন ভূঁইয়া বাঁয়ে
ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে নিজের ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকানে গত বৃহস্পতিবার বসে কেনাবেচা করছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ ইসহাক ভূঁইয়া। সোনারগাঁ থানা পুলিশের একটি দল দোকানটিতে অভিযান চালিয়ে ইসহাককে গ্রেপ্তার করে। সন্ত্রাসী দমন আইনে বিএনপি নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে করা পুলিশের একটি মামলায় বর্তমানে তিনি কারাবন্দী।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে ইসহাক ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অসুস্থ ইসহাককে কারাগারে ওষুধ দিতে গেলে গতকাল রোববার গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর দুই ব্যবসায়ী ছেলেকেও।

স্বজনদের দাবি, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসহাক ভূঁইয়ার সম্পৃক্ততা নেই। তবে তাঁর জামাতা সালাউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক। গ্রেপ্তার এড়াতে ১৫ দিন ধরে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ সালাউদ্দিনকে না পেয়ে তাঁর শ্বশুর ইসহাক ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল ইসহাক ভূঁইয়ার জন্য ওষুধ নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন তাঁর দুই ব্যবসায়ী ছেলে নয়ন ভূঁইয়া ও সুমন ভূঁইয়া। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাঁদেরও তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বজনেরা।

আজ সোমবার বিকেলে ইসহাকের মেয়ে তানিয়া আক্তারের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। পেশায় গৃহিণী তানিয়া আক্তার জানান, ওষুধ নিয়ে কারাগারে বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর গতকাল বেলা ১১টা থেকে তাঁর দুই ভাইয়ের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁদের মুঠোফোন নম্বর দুটো বন্ধ ছিল। এ সময় বিভিন্ন থানায় খোঁজ করেও ভাইদের কোনো খোঁজ পাননি তানিয়া। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানতে পারেন, তাঁর দুই ভাই গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে আছেন।

বাবা ও ভাইদের গ্রেপ্তারের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তানিয়া। তিনি বলেন, ‘স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা, তাঁর বিষয়ে এখন আর বিচলিত নই। কিন্তু স্বামীর রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে বাবার কারাবন্দী হওয়া ও ভাইদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না। এমন ঘটনার পর আমার পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির কোনো পুরুষ সদস্য এখন আর বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এমনকি আমার ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া দুই ছেলেকেও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হচ্ছে।’

পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে তানিয়া বলেন, ‘গত ১৯ অক্টোবর থেকে পুলিশ ও ডিবি অন্তত ১০ বার আমাদের বাড়িতে এসেছে। তাঁরা আমার স্বামীকে বাড়িতে না পেয়ে আমাকে হুমকি দিয়েছে। পুলিশ বলেছে, যদি সোনারগাঁয়ে বিএনপির আর কোনো কর্মসূচি হয়, তবে তারা আমাকে ও আমার সন্তানদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবে। বিষয়গুলো আমার মা শুনেছেন। স্বামী পলাতক, বাবা কারাবন্দী, দুই ভাই ডিবির হাতে, আমার বৃদ্ধা মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আমি জানি না কার কাছে যাব। কাকে গিয়ে আমাদের অসহায়ত্বের কথা বলব।’

সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর বেহাকৈর এলাকায় ইসহাক ভূঁইয়ার বাড়ি। বেহাকৈর এলাকায় খোঁজ নিয়ে ইসহাক ভূঁইয়া ও তাঁর দুই ছেলের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়নি। তবে ইসহাকের ছোট ছেলে রাজন ভূঁইয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সালাউদ্দিন এই প্রতিবেদককে ফোন করে জানান, প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর পুলিশ নয়ন ও সুমনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে বলেন, নয়ন ও সুমন বিএনপির নাশকতার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সোনারগাঁ থানায় করা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ইসহাক ভূঁইয়ার গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম জানান, সাঈদ ভূঁইয়া কাঁচপুরের গাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে যুক্ত। মামলার অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

বিএনপি নেতা–কর্মীদের না পেয়ে তাঁদের স্বজনদের গ্রেপ্তার ও মারধর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গত ১৯ অক্টোবর থেকে জেলায় অন্তত ১৭ জন বিএনপি নেতা–কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। পুলিশ নেতা-কর্মীদের না পেয়ে তাঁদের স্বজনদের ধরে নিয়ে আসছে। রূপগঞ্জে ছেলে ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁর মাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।’