চুয়াডাঙ্গায় টানা তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস অবস্থা

প্রখর রোদ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা মাথায় বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছে ছাত্রীরা । আজ শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় আজ শনিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গতকালের তুলনায় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত প্রখর রোদ ছিল। এরপর রোদ ও মেঘের লুকোচুরি শুরু হলেও ভ্যাপসা গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ (শনিবার) সন্ধ্যা ছয়টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫৭ শতাংশ। যেখানে গতকাল শুক্রবার একই সময়ে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫৬ শতাংশ।  

শুক্রবারের সাপ্তাহিক বন্ধের পরদিন আজ শনিবার শহরে লোকসমাগম বেশি থাকে। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আজ গোটা শহরেই মানুষের চলাচল তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

এ বিষয়ে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর পর্যন্ত আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় সূর্যের তাপ সরাসরি ভূপৃষ্ঠের ওপরে পড়ায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে সাগরে নিম্নচাপের কারণে বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির কারণে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতায় শুক্রবারের সাপ্তাহিক বন্ধের পরদিন আজ শনিবার শহরে লোকসমাগম বেশি থাকে। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আজ গোটা শহরেই মানুষের চলাচল তুলনামূলকভাবে কম ছিল। মফস্‌সল থেকে মানুষ কম আসায় জেলা শহরের দোকানপাটগুলোয় বেচাকেনা তেমন ছিল না বললেই চলে।

শহরের পুরোনো বাজারের কাপড় দোকানি খায়রুল হাসান জানান, সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার ক্রেতাদের চাপ থাকার কথা থাকলেও পুরো বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। দোকানি ও কর্মচারীরা শুয়ে-বসে সময় কাটান।

অসহনীয় গরমের কারণে আন্তজেলা পথে বাসে যাত্রী চলাচল ছিল সীমিত। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর রুটের বাসচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যেদিন বেশি গরম পড়ে, সেদিন প্যাসেঞ্জার কোম ওটে (যাত্রী কম ওঠে)। যা ইনকাম হয় তেল কিনতিই ফুরিয়ে যায়।’

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসের তুলনায় এবার একই সময়ে তাপপ্রবাহ তুলনামূলকভাবে বেশি। গত বছর এপ্রিল মাসে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ২৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। যার মধ্যে আট দিন তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসটিতে অন্তত পাঁচ দিনে মোট ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

তবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। ওই মাসে ৩০ দিনের মধ্যে ১৮ দিনই তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রির ওপরে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসের শেষ দিনটিতে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৪ এপ্রিল মাত্র এক দিন ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় চলতি বছরে মাসটিতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ৪০ ডিগ্রির ওপর তাপমাত্রা বেড়েছে ১০ দিন এবং গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এপ্রিল মাসের ধারাবাহিকতায় মে মাসের প্রথম তিন দিন জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। এবার ১ মে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ ২৫ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ গত বছরের এই দুই দিনে যথাক্রমে তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।