কুমিল্লার সেই মণ্ডপে পূজার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

কুমিল্লা জেলার মানচিত্র

শারদীয় দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীতে গত বছর কুমিল্লা নগরের নানুয়াদিঘির উত্তর পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় পূজা বন্ধ হয়ে যায়। এতে কান্নায় ভেঙে পড়ে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবার প্রশাসনের অভয়ে একই স্থানে পূজা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

সরেজমিনে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় দেখা যায়, নানুয়াদিঘির উত্তর পাড়ে ঘাটলা ঘিরে সড়কের গা ঘেঁষেই স্থানীয় দর্পণ সংঘের উদ্যোগে পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার পূজামণ্ডপ আকারে ছোট। তখন পর্যন্ত প্রতিমা বসানো হয়নি। প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে অন্যস্থানে। সেখান থেকে এনে প্রতিমা বসানো হবে। দিঘির উত্তর ও পশ্চিম পাড়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, এবার পূজায় কোনো ঝামেলা হবে না। তবে ভয় আছে, হঠাৎ যদি কেউ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।

নানুয়াদিঘির পাড় এলাকার এক পুণ্যার্থী বলেন, ‘গত বছর কে কী কারণে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননা করল, তার তদন্ত হলো না। এতে একটা শঙ্কা আছে। তারপরও উৎসব হবে। আমাদের এলাকায় আমরা হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করি।’

দর্পণ সংঘের সভাপতি ও কুমিল্লা মহানগর পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, গতবারের ঘটনায় মানুষের মনে ক্ষত রয়ে গেছে। চাপা আতঙ্কও আছে। এরপরও প্রশাসনের আশ্বাসে পূজা করা হচ্ছে। এবার পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, গত বছরের ১৩ অক্টোবর নানুয়াদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এর জেরে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১২টি মামলা হয়। পুলিশ এসব মামলার তদন্ত করছে। এবার নানুয়াদিঘিসহ সব স্থানের পূজামণ্ডপের ওপর কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।

দিলীপের পরিবারে কান্না থামেনি

কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ থানা রোড এলাকার বাসিন্দা দিলীপ দাস (৬১)। গত বছরের ১৩ অক্টোবর বেলা দুইটায় কুমিল্লা নগরের মনোহরপুর এলাকার রাজ রাজেশ্বরী কালীমন্দিরে ছিলেন। তখন মন্দিরের সামনের সড়ক দিয়ে মিছিল যাচ্ছিল। ওই মিছিল থেকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এতে তাঁর মাথায় ইটের টুকরা পড়ে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় ২৪ অক্টোবর দিলীপ দাসের স্ত্রী রূপা রানী দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ পর্যন্ত মামলার সন্দেহভাজন ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে তদন্ত আর এগোয়নি।

দিলীপ দাসের স্ত্রী রূপা রানী দাস বলেন, ১৩ অক্টোবর নানুয়াদিঘির পাড়ের ঘটনার পর কুমিল্লা নগরে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মনোহরপুর মাতৃভান্ডার মিষ্টি দোকানের সামনে দিয়ে যে মিছিলগুলো গেছে, সিসিটিভি ক্যামেরা দেখলে বোঝা যাবে, কারা ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার হিসেবে আমাদের সাহায্য করার কথা সরকারের। নামও নেওয়া হয়। কিন্তু কিছু পাইনি। এখনো মেয়ের বিয়ে দিতে পারিনি। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। স্বামী হত্যারও বিচার পাইলাম না। আমার স্বামী মানুষের কাজ করতেন। হিন্দু-মুসলিম সবার কাজ করতেন।’