বিয়ের ১৮ দিন পর গৃহবধূর মৃত্যু, মামলা না নেওয়ার অভিযোগে পরিবারের মানববন্ধন

জাহিদা আফরিনের মৃত্যুকে মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ দাবি করে এবং থানায় হত্যা মামলা না নেওয়ার অভিযোগে জাহিদার স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করেছেন
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের রাউজানে বিয়ের ১৮ দিন পর গৃহবধূ জাহিদা আফরিন ওরফে তাইরিনের (২২) মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ দাবি করে এবং থানায় হত্যা মামলা না নেওয়ার অভিযোগে জাহিদার স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করেছেন। আজ রোববার বিকেলের দিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের শান্তির হাট এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

জাহিদা আফরিন রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের গর্জার গণি পাড়ার মো. ইসমাইলের স্ত্রী এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের শান্তির হাট গ্রামের মুহাম্মদ ইউসুফের মেয়ে। গত ১৫ আগস্ট ইসমাইলের সঙ্গে জাহিদার বিয়ে হয়। জাহিদা স্থানীয় একটি মাদ্রাসার কামিল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর ইসমাইল চট্টগ্রাম নগরে বাবার ভবন দেখাশোনা করেন। গত শুক্রবার দুপুরে রাউজানে শ্বশুরবাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে জাহিদার লাশ উদ্ধার করা হয়। জাহিদার পরিবারের দাবি, ইসমাইল মাদকাসক্ত। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় জাহিদাকে হত্যা করেছেন। তবে ইসমাইলের দাবি, তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।

আজ মানববন্ধন শেষে জাহিদার বড় ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বিয়ের পর জাহিদাকে একবারও বাবার বাড়িতে যেতে দেননি শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাঁর বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে। থানায় মামলা না নেওয়ায় স্থানীয় লোকজন নিয়ে তিনি মানববন্ধন করেছেন।

মানববন্ধনে জাহিদার বাবা মুহাম্মদ ইউসুফও উপস্থিত ছিলেন। জাহিদার পরিবারের লোকজন বলেন, শুক্রবার দুপুরে শ্বশুরবাড়ির একটি কক্ষ থেকে জাহিদার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর লাশ খাটের ওপর পড়ে ছিল। জাহিদার গলায় দাগ পাওয়া গেছে। জাহিদাকে নির্যাতন করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছেন। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাবার বাড়িতে যেতে দেয়নি। মুঠোফোনেও জাহিদাকে বাবার বাড়িতে কথা বলতে দেওয়া হতো না বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

অভিযোগের বিষয়ে জাহিদার স্বামী মো. ইসমাইল বলেন, ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে জাহিদা আত্মহত্যা করেছেন। বাবার বাড়িতে যেতে না দেওয়ার বিষয়ে ইসমাইল বলেন, তাঁর মা মারা গেছেন ৪০ দিন পার হয়নি। এ জন্য জাহিদাকে বাবার বাড়িতে যেতে দেওয়া হয়নি।

এদিকে গতকাল শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে জাহিদার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাত নয়টার দিকে স্থানীয় পোমরা ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে জাহিদার দাফন সম্পন্ন হয়। জাহিদা হত্যার ঘটনায় রাউজান থানায় নিহত গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তবে জাহিদার ভাই মুহাম্মদ ইব্রাহিমের দাবি, তাঁরা থানায় হত্যা মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ।

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হারুন প্রথম আলোকে বলেন, নিহত গৃহবধূর বাবার বাড়ির কেউ মামলা দিতে না আসায় স্বামীর পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এখন যদি নিহত গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোকজন হত্যা মামলা করতে চান, তাহলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটা হত্যা না আত্মহত্যা—সেটা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।