দিনাজপুরে টাকার সঙ্গে ঘুষ নিলেন রাজহাঁসও
সরকারের ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কর্মসূচির কার্ড করে দিতে ঘুষ হিসেবে টাকা ও বাড়ির রাজহাঁস নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের বিরুদ্ধে।
ওই ইউপি সদস্যের নাম আবুল কাসেম। তিনি দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার খট্টামাধবপাড়া ইউপির সদস্য। তিনি ওই ইউনিয়ন শাখা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন।
ইউপি সদস্য আবুল কাসেম ভিডব্লিউবি কর্মসূচির কার্ড ছাড়াও মাতৃত্বকালীন, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা ভাতা কার্ড এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির (আরইআরএমপি) সদস্য করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তিনি বিভিন্ন সময়ে ওই ওয়ার্ডের ২০ থেকে ৩০ জন নারী-পুরুষের কাছ থেকে ২ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
১৯ নভেম্বর খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের বিলেরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ হাসান ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, চার মাস আগে তাঁর মা ভিডব্লিউবি কর্মসূচির একটি কার্ড করার জন্য ইউপি সদস্য আবুল কাসেমের কাছে যান। এ সময় ইউপি সদস্য তাঁর মায়ের নামে কার্ড করে দিতে চার হাজার টাকা চান। পরে তাঁর মা ইউপি সদস্যকে দুই হাজার টাকা দেন। বাকি দুই হাজার টাকা নিতে ইউপি সদস্যের স্ত্রী তাঁদের বাড়িতে যান এবং তাঁর মায়ের পালিত একটি বড় রাজহাঁস নিয়ে যান।
এর আগে ১০ নভেম্বর একই ওয়ার্ডের নওদাপাড়া গ্রামের বুলি বিবি নামের এক নারী ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, চার মাস আগে তাঁর ছেলের স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ইউপি সদস্য আবুল কাসেম দুই হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু চার মাস পার হলেও ইউপি সদস্য তাঁর ছেলের স্ত্রীর নামে কার্ড করে দেননি। এ জন্য ইউপি সদস্য বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করছেন।
খট্টামাধবপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান কাওছার রহমান বলেন, ‘আবুল কাসেম তাঁর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৪টি লিখিত অভিযোগ এবং ২০ থেকে ৩০ জনের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত তদন্তের মাধ্যমে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ২০ নভেম্বর হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য আবুল কাসেম বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের বুলি বেগম তাঁর ছেলের স্ত্রী শাবনাজের মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আমার স্ত্রীর কাছে দুই হাজার টাকা দিয়ে গেছে। আমি এটি আগে জানতাম না, পরে জানছি। আমার স্ত্রী আমাকে বলছিল, “শাবনাজের কার্ডটা করে দেন তো।” আমি কইছি নভেম্বর মাসে করে দিব। আর আমার বাড়িতেই তো ৭০ থেকে ৮০টা হাঁস আছে, আমি কেন জাহিদের বাড়ি থেকে রাজহাঁস নিব। কাওছার চেয়ারম্যান ওই জাহিদকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করাইছে।’