‘সন্তান দুনিয়াতে আসবে, দেখতে পাব কি না, জানতাম না’

চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে হাস্যোজ্জ্বল এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিক শফিকুল ইসলাম। আজ বিকেলেছবি: প্রথম আলো

‘জিম্মি ছিলাম। সন্তান দুনিয়াতে আসবে, দেখতে পাব কি না, জানতাম না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। সবাই দোয়া করেছেন। আজকে খুশির কোনো সীমা নেই।’ এমন আবেগঘন কথাগুলো এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের চিফ কুক শফিকুল ইসলামের। আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর।

সোমালিয়ার দস্যুদের হাতে প্রায় এক মাস জিম্মি ছিলেন শফিকুল ইসলাম। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিকের একজন তিনি।

শফিকুল ইসলামের জন্য আজকের দিনটি খুবই আনন্দের। কারণ, সোমালিয়ার দস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ যখন ছিনতাই করেছিল, তখন সন্তানসম্ভবা ছিলেন নাবিক শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সাজিয়া আলম। জিম্মিদশা থেকে ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে মুক্তি পান শফিকুল ইসলামসহ ২৩ নাবিক। দুদিন পর শফিকুল-সাজিয়ার ঘর আলো করে আসে কন্যাসন্তান। কন্যাসন্তানের নাম রাখা হয় রাফিয়া ইসলাম রাফা। আজ বাসায় ফিরে শফিকুল ইসলাম আদরের কন্যাকে কোলে তুলে নেন।

শফিকুল যে জিম্মি জানতেন না মা

জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাস পর আজ শফিকুল ইসলাম বাসায় ফিরে আসেন। চট্টগ্রামের সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় আরশিনগরের বাসায় যখন শফিকুল ফেরেন, তখনই মাকে জানানো হয় জিম্মিদশার ঘটনা। তাতেই বাসায় আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। ছেলের জিম্মি থাকার ঘটনা টের পেলে মা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন, এ আশঙ্কায় মাকে জানাননি স্বজনেরা।

শফিকুল ইসলামের ভাই দিদারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শফিকুল যে জিম্মি ছিল, আম্মা জানত না। আমরা বলেছিলাম, শফিকুল যে জাহাজে চাকরি করে, সেটি ছিনতাই হয়নি। কেএসআরএম গ্রুপের অন্য জাহাজ ছিনতাই হয়েছে। মা যাতে জানতে না পারে, সে জন্য টেলিভিশনে খবর দেখাতাম না তাকে।’

দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বাসায় ফেরার পর মাকে জানানো হয়। তখনই আনন্দের কান্না বয়ে যায় বাসাজুড়ে। আত্মীয়স্বজনেরাও ছুটে আসেন বাসায়। আমাদের খুশির দিন আজ।’

বাসায় ফেরার পর শফিকুল ইসলামের মা খুরশিদা বেগম ছেলের জিম্মিদশার কাহিনি শুনে অবাক হয়ে যান। ছয় ভাই ও এক বোনের সবাই এই ঘটনা তাঁদের মা খুরশিদা বেগম থেকে আড়াল করেছেন।

শফিকুলের আরেক ভাই সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোমালিয়ার দস্যুরা জাহাজটি ছিনতাই করার সময় মা অসুস্থ ছিলেন। মা যাতে দুশ্চিন্তা না করেন সে জন্যই ঘটনাটি আড়াল করে রাখি আমরা।

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের এই জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরা। মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। গতকাল সোমবার জাহাজটি কুতুবদিয়ায় নোঙর করে। সেখান থেকে এমভি জাহান মণি–৩ জাহাজে করে নাবিকদের বন্দর জেটিতে আনা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকতা সেরে নাবিকেরা বাসায় ফেরেন।