যে কারণে রাকসুতেও ভরাডুবি ছাত্রদলের

রাকসুর ২৩টি পদের মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছে ছাত্রদল। হল সংসদগুলোর শীর্ষ পদে ও সিনেটে তাদের কোনো প্রার্থী জিততে পারেননি।

রাকসু নির্বাচনে গত বৃহস্পতিবার দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভোট দেন শিক্ষার্থীরাছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনেও ভরাডুবি হলো বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের। রাকসু নির্বাচনে ২৩টি পদের মধ্যে মাত্র একটি সম্পাদক পদে জিতেছেন ছাত্রদলের প্রার্থী। ১৭টি হল সংসদের শীর্ষ ৫১ পদের কোনোটিতেই ছাত্রদলের প্রার্থীরা জিততে পারেননি। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদের একটিতেও তাঁরা নির্বাচিত হননি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনেও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো ছাত্রদল।

রাকসুতে ছাত্রদলের এমন পরাজয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে নিয়মিত হলেও তারা সংগঠন গোছাতে পারেনি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে ‘গ্রুপিং’ বা অন্তঃকোন্দল আছে। যেমন এবারের নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলের বাইরে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ক্রীড়া সম্পাদক মেহেদী হাসান। এ ঘটনায় নির্বাচনের আগের দিন গত বুধবার তাঁকে সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

গত এক বছরে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছে। তারপরও কেন এমন হলো, তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
সুলতান আহমেদ, সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ততা কম

আওয়ামী লীগের আমলে নানা কৌশলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিচয়ে ক্যাম্পাসে ছিলেন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। ফলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের একধরনের যুক্ততা ছিল। যেটা ছাত্রদলের ছিল না। 

ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করেছেন শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি শেখ নূর উদ্দীন (আবীর)। রাকসুর ফলাফলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হয়তো আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে সেভাবে পৌঁছাতে পারিনি, আমাদের চিন্তাভাবনা তাদের বোঝাতে পারিনি। ফলাফল যা-ই হোক, শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে যাব।’

আওয়ামী লীগ শাসনামলে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের একক আধিপত্য ছিল। ক্যাম্পাসে অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়নি ছাত্রলীগ। হলে সিট-বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা জড়িত ছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে এ ধরনের সংস্কৃতি বন্ধ হয়েছে।

তবে শিক্ষার্থীদের অনেকে মনে করেন, ছাত্রদল রাকসুতে জিতলে ক্যাম্পাসের বর্তমান স্বস্তিদায়ক পরিবেশ বজায় না–ও থাকতে পারে—এমন প্রচারণা ক্যাম্পাসে ছড়িয়েছে তাদের প্রতিপক্ষ। বিষয়টি নির্বাচনে ছাত্রদলকে কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের যেসব অভিযোগ উঠছে, সেগুলোর জন্য ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ছাত্রদলকে ভুগতে হয়েছে।

নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা ছিল

এর বাইরে আরেকটি কারণও শিক্ষার্থীদের ভাষ্যে জোরালোভাবে উঠে এসেছে। সেটা হলো রাকসু নির্বাচন আয়োজনের আলোচনা শুরু হলে এই নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদলের মধ্যে একধরনের অনীহা ছিল। এমন আলোচনাও আছে, ছাত্রদল রাকসু নির্বাচন পেছাতে নানা ধরনের চেষ্টা করেছে। ছাত্রদল ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের অনেকে নির্বাচন পেছাতে তৎপর ছিলেন। এক দফা নির্বাচন পেছানোও হয়। এ বিষয়টি শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেননি। এর প্রভাবও নির্বাচনের ফলাফলে পড়েছে।

রাকসু নির্বাচনে এমন পরাজয়ের বিষয়ে শিগগিরই আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত এক বছরে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছে। তারপরও কেন এমন হলো, তা নিয়ে তাঁরা বিশ্লেষণ করছেন। তবে তাঁরা শিক্ষার্থীদের মতামতকে সম্মান জানিয়ে ফলাফল মেনে নিয়েছেন।